সরেজমিনে: পুড়ে যাওয়া থানা চত্বর ঘুরে দেখছেন এডিজি ‘উত্তরবঙ্গ’ অজয় কুমার। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
২০১৮ সালে উত্তর দিনাজপুরের দাড়িভিট কাণ্ড নিয়ে আন্দোলনে নেমে পরের বছরের লোকসভা ভোটে ‘সুফল’ পেয়েছিল বিজেপি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের দাবি, অন্তত এমনটাই। আগামী লোকসভা নির্বাচনের ঠিক এক বছর আগে, উত্তর দিনাজপুরে গণধর্ষণ ও খুনের অভিযোগের ঘটনায় বিজেপি আন্দোলন শুরু করেছে। কিন্তু মঙ্গলবার থানা জ্বালানোর মতো ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে পরিস্থিতি যে দিকে গড়িয়েছে তাতে, এই কাণ্ডের ‘সুফল’ ভোটে কতটা বিজেপি ধরে রাখতে পারবে তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল।
অনেকেই বলছেন, এ দিন যে ঘটনা ঘটেছে তা ২০১৬ সালে মালদহের কালিয়াচক থানা পোড়ানোর মতো ঘটনার স্মৃতি উস্কে গিয়েছে। যা কারও পক্ষেই খুব ভাল ‘বিজ্ঞাপন’ নয় বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তৃণমূলের অভিযোগ, অপরাধমূলক কোনও ঘটনা ঘটলেই বিজেপি সে ঘটনাকে নিয়ে রাজনীতি করে জেলাকে অগ্নিগর্ভ করে তুলছে। জেলার মানুষ এই ধরনের হিংসাত্মক আন্দোলন পছন্দ করেন না। বিজেপি নেতৃত্বের অবশ্য বক্তব্য, দল দোষীদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন করছে। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
২০১৮ সালের শিক্ষক নিয়োগ কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল দাড়িভিট। গুলিতে মৃত্যু হয় তাপস বর্মণ ও রাজেশ সরকার নামে ওই স্কুলের দুই প্রাক্তনীর। গুলিতে আহত হয় এক স্কুলপড়ুয়াও। ঘটনার পরে, সিবিআই তদন্তের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন নিহতের পরিবারের সদস্যেরা। তাঁদের পাশে থেকে আন্দোলনের নামে বিজেপি। রাজনৈতিক মহলের মতে, সে সময় উত্তর দিনাজপুর জেলায় বিজেপির তেমন প্রভাব না থাকলেও, দাড়িভিট কাণ্ড থেকেই বিজেপি নিজেদের ভিত শক্ত করা শুরু করে।
নিহতদের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায় তৎকালীন বিজেপি নেত্রী ও বর্তমান সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী-সহ অন্য নেতৃত্বকে। পরে লোকসভা ভোটে ফায়দাও পায় বিজেপি। সাংসদ হন দেবশ্রী। এ বারেও কি একই কায়দাতে বিজেপি উত্তর দিনাজপুরের গণধর্ষণ ও খুনের অভিযোগের ঘটনাকে সামনে রেখে আন্দোলনে নামার ছক কষেছিল? তৃণমূলের অভিযোগ ছিল তেমনই।
তবে এ দিন যে ভাবে থানায় আগুন জ্বালানোর মতো ঘটনা ঘটেছে, তাতে ২০১৬ সালে কার্যত এক দল ‘দুষ্কৃতীর’ হাতে পার্শ্ববর্তী জেলা মালদহের কালিয়াচক থানায় যে ভাবে আগুন জ্বালানো হয়েছিল তারই সাদৃশ্য খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে। সে বার নতুন বছরের দু’দিন পরেই লখনউয়ের এক নেতার মন্তব্যের জেরে প্রতিবাদ জানাতে সুবিশাল মিছিল থেকে কালিয়াচক থানায় ঢুকে হামলা ও আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছিল। এখন প্রশ্ন, উত্তর দিনাজপুরে থানায় আগুন জ্বালানোর ঘটনা এ দিন যে ঘটে গেল, তাতে কি ওই আন্দোলনের রাশ কোনও পক্ষ ধরে রাখতে পারবে?
বিজেপির জেলা সভাপতি বাসুদেব সরকারের বক্তব্য, “উত্তর দিনাজপুরের সাধারণ মানুষ বিজেপির পাশে আছেন। দাড়িভিট কাণ্ড ও সম্প্রতি, নাবালিকাকে গণধর্ষণ ও খুনিদের অভিযোগের ঘটনার প্রতিবাদে এবং অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে বিজেপি একমাত্র রাস্তায় রয়েছে। সাধারণ, মানুষ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন। বিজেপি জেলায় সমান তালে দুর্নীতি ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করেচলেছে, চলবে।”
পাল্টা, জেলা তৃণমূল সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়ালের বক্তব্য, “জেলায় আসলে বিজেপির কোনও সংগঠন নেই। তা, অপরাধমূলক কোনও ঘটনা ঘটলেই বিজেপি সে সব ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করে, বার বার জেলাকে অগ্নিগর্ভ ও অশান্ত করছে। পুলিশ ও প্রশাসন বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা নিলেও, বিজেপি প্ররোচনা সৃষ্টি করে ফের জেলায় আইনশৃঙ্খলা নষ্ট করছে। এ ভাবে রাজনীতি করে বিজেপির সংগঠন জেলায় শক্তিশালী হবে না। মানুষ সব বুঝতে পারছেন।”