প্রতীকী চিত্র
উত্তরবঙ্গের জন্য আলাদা করে ‘স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স’ (এসটিএফ) তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেল পুরোদমে। রাজ্য সরকারের ঘোষণার পাঁচ মাসের মাথায় শুরু হল এই কাজ। সন্ত্রাস দমনের পাশাপাশি, জাল নোট, মাদক, টাকার বেআইনি লেনদেন সংক্রান্ত মামলা, তদন্ত ও খোঁজখবর রাখবে এসটিএফ। এছাড়া অস্ত্র, বিস্ফোরক সংক্রান্ত মামলার তদন্তের খবরও রাখবে। শিলিগুড়িতে তৈরি হচ্ছে এসটিএফের দফতর। মঙ্গলবার এসটিএফের উত্তরবঙ্গের নতুন পুলিশ সুপার নিয়োগও হয়েছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা পুলিশের ধাঁচে রাজ্যে আলাদা করে এসটিএফ গঠনের ঘোষণা করেছিলেন। কলকাতার রিপন স্ট্রিটে সদর দফতর তৈরির কথা ঠিক হয়। এর পরে উত্তরবঙ্গের জন্য আলাদা করে বাহিনীর একটি শাখা রাখার কথা ঠিক হয়। ইতিমধ্যে এসটিএফের প্রধান হিসাবে রাজ্য আইপিএস অজয় নন্দাকে নিয়োগ করেছে। তিনি জঙ্গলমহল ছাড়াও দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি জেলাতে বিভিন্ন পদে একসময় কর্মরত ছিলেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি লাগোয়া ফুলবাড়িতে দশম-দ্বাদশ সশস্ত্র ব্যাটেলিয়ানের পাশে এসটিএফের উত্তরবঙ্গের সদর দফতর তৈরি নিয়ে কথাবার্তা এগিয়েছে। গত কিছুদিন ধরে এসটিএফের নিজস্ব বাহিনী তৈরি করতে বিভিন্ন স্তরের তরুণ, উদ্যোমী পুলিশকর্মীদের খোঁজ শুরু হয়েছে। শারীরিকভাবে সুস্থ, তথ্যপ্রযুক্তিতে সাবলীল এবং পুলিশের বিভিন্ন আইন জানা ছাড়াও বিভিন্ন অস্ত্র চালাতে পারদর্শী অফিসারদের এসটিএফে নিয়োগ করা হচ্ছে। রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের এক কর্তা বলেন, ‘‘নতুন পুলিশ সুপার শিলিগুড়িতে বসেই বাহিনী এবং পরিকাঠামো তৈরির কাজ দ্রুত শেষ করবেন।’’
উত্তরবঙ্গের পুলিশের পুরনো অফিসারেরা জানিয়েছেন, কখনও ভিন্দেশ বা ভিন্রাজ্য থেকে উত্তরবঙ্গে জঙ্গি ঢুকে পড়ার, কখনও মালদহের জাল নোটের কারবারের খবর আসে। আবার ব্যাঙ্ক ও অর্থলগ্নি সংস্থায় লুট করে ভিন্রাজ্যে আশ্রয়ের ঘটনা ঘটেছে। আবার অসম থেকে কেএলও, আলফা-সহ নানা সংগঠনের গতিবিধি তো আছেই। বিভিন্ন সময়ে আসে বোমা বা আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের মামলা। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গে মাদক ও বিদেশি সোনা উদ্ধারের ঘটনা আকছাড় ঘটছে। এর সঙ্গে জুড়েছে বন্যপ্রাণের পাচার, জাতীয় উদ্যান বা অভয়ারণ্যে হানা দেওয়ার ঘটনা। সংশ্লিষ্ট থানা, গোয়েন্দা শাখা এবং সিআইডি নিয়মিত এই ধরনের মামলাগুলির তদন্ত করে থাকে। এই ধরনের মামলার তদন্তে নিয়মিত ভিন্রাজ্যে যেতে হয়। এ ছাড়া অন্য মামলাও সামলাতে হয় ফলে সব মিলিয়ে ঘুম উড়ে যায় ওই অফিসারদের। নতুন বাহিনী এই বিষয়গুলি নিয়েই সবসময় কাজ করতে পারবেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, সন্ত্রাস দমনে তৈরি কলকাতা পুলিশের এসটিএফ বরাবর সাফল্য পেয়েছে। জঙ্গলমহল থেকে মাওবাদী গ্রেফতার থেকে শুরু করে ভারত-নেপাল সীমান্ত থেকে জামাত সদস্যদের গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ। কিন্তু গোটা রাজ্যের উপর নিয়মিত নজর রাখা কলকাতা পুলিশের পক্ষে সম্ভব নয়। আবার রাজ্য পুলিশের আলাদা এসটিএফ হলেও উত্তরবঙ্গে আলাদা দফতর না থাকলে লক্ষ্যপূরণ হত না। কারণ, শিলিগুড়িতে একসময় আইএসআই এজেন্ট গ্রেফতার হয়েছে। নেপালের মাওবাদী শীর্ষ নেতাও গ্রেফতার হয়েছে। কেএলও বা আলফা’র অস্বস্তি অনেকটা কম মনে হলেও মাঝেমধ্যে অসমের দিক থেকে এসে টাকা আদায়ের চেষ্টার খবর পুলিশ বা গোয়েন্দারা পান। উত্তর পূর্বাঞ্চল থেকে পাহাড়ে অত্যাধুনিক অস্ত্র পাচারের খবরও সামনে এসেছে। কিন্তু লোকবল, পরিকাঠামোর সমস্যার জন্য সবসময় অফিসারদের একটি ‘ক্লু’কে ধরে ভিনরাজ্য বা জেলায় ঘুরে বেড়ানো সম্ভব হয় না। এসটিএফ-এর অফিসারেরা তা করতে পারবেন।