দ্রুত বের করে নিয়ে আসা হচ্ছে আতঙ্কিত এক রোগিণীকে। — নিজস্ব চিত্র
আগুনের ফুলকি দেখা গিয়েছিল হাসপাতাল চত্বরের বাইরে বিদ্যুতের তারে৷ কিন্তু সেই ফুলকিই যেন বিদ্যুৎ গতিতে আতঙ্ক ছড়াল গোটা হাসপাতালে থাকা রোগী ও তাদের আত্মীয়দের মধ্যে৷ মুর্শিদাবাদের ঘটনার আতঙ্কের রেশ ছিলই। তাই আগুনের ফুলকি দেখেই ভরসন্ধ্যায় হুলুস্থুল বাধল জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে ৷
ঘড়িতে তখন সন্ধ্যা সাড়ে ছটা৷ তার আধঘণ্টা আগেই হাসপাতালে শেষ হয়েছে বিকেলের ভিজিটিং আওয়ার৷ আর পাঁচটা দিনের মতই হাসপাতালের নিরাপত্তা রক্ষীরা সময় পেরনোর পরও ভিতরে থেকে যাওয়া আত্মীয়দের বের করে সবে একটু হাঁফ ছাড়ার সময় পেয়েছেন৷ তখনই ঘটল এই কাণ্ড!
জলপাইগুড়ি হাসপাতালের পিছন দিকে সীমানা প্রাচীরের বাইরে দিয়ে যাওয়া রাস্তার ধারে বিদ্যুতের তারে আগুনের ফুলকি দেখা গেল। হাসপাতালের দোতলায় থাকা প্রসূতি বিভাগের জানালা দিয়ে ওই তার সহজেই দেখা যায়৷ রোগীদের কারও কারও চোখে পড়ে যায় সেই ফুলকি৷ টিভিতে মুর্শিদাবাদের হাসপাতালে মর্মান্তিক ঘটনা দেখে এমনিতেই চাপা আতঙ্ক ছিল অনেকের মধ্যে। ফুলকি দেখা তাতে ঘৃতাহুতি দেয়। গুজব ছড়িয়ে যায় হাসপাতালে আগুন লেগে গেছে৷ যেমনি এই গুজব রটা শুরু, তেমনি শুরু হুড়োহুড়ি৷
রোগীদের মুখে মুখে আগুনের কথা চাউর হতেই ফায়ার এক্সটিংগুইসার নিয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন হাসপাতাল কর্মী ও নিরাপত্তারক্ষীরা ৷ প্রসুতি বিভাগের অর্ধেকের বেশী রোগী যে যার মত প্রাণ বাঁচাতে ছুটতে শুরু করেন সিঁড়ির দিকে৷ সিড়ি দিয়ে নেমে বাইরে বেরিয়ে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন তাঁরা৷ ততক্ষণে ‘আগুন লাগার’ খবর চাউর হয়ে গিয়েছে অন্য বিভাগেও৷ ফলে সেই সব বিভাগ থেকে যে যেভাবে পারছেন দৌড়ে হাসপাতাল ভবনের বাইরে বের হতে থাকেন৷
হাসপাতালের সামনে ভিড় করেছেন রোগীর পরিজনেরা। — নিজস্ব চিত্র
জলপাইগুড়ির দেবনগর এলাকার বাসিন্দা সুপ্রিয়া সরকার ভর্তি ছিলেন প্রসূতি বিভাগে৷ তাঁর কথায়, “সেই সময় বেডেই শুয়ে ছিলাম৷ আচমকা চারদিক থেকে চিৎকার শুরু হল – ‘হাসপাতালে আগুন লেগে গেছে৷’ সবাই পড়িমরি করে ছুটছিলেন৷ আমিও ছুটে দোতলা থেকে নেমে বাইরে বেরিয়ে এলাম৷” মন্ডলঘাট এলাকার বাসিন্দা চয়নিকা মজুমদারের কথায়, “হাসপাতালে আগুন লেগেছে শুনে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম৷ তখন মাথাও আর কাজ করছিল না৷ তাই দ্রুত নেমে গেলাম৷”
ততক্ষণে হাসপাতালে আগুন লাগার খবর পৌঁছে গিয়েছে দমকলেও৷ ফলে দ্রুত দমকলের দুটো ইঞ্জিন হাসপাতালে ছুটে যায়৷ ঘটনাস্থলে যায় পুলিশও৷ কিন্তু তার আগেই দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছন হাসপাতাল কর্তারা৷ কর্মীদের নিয়ে তাঁরাই রোগীদের বোঝাতে শুরু করেন, হাসপাতালে আগুন লাগেইনি৷ তাই তাঁরা যেন নিজেদের বেডে ফিরে যান৷ প্রায় আধঘন্টা ধরে বোঝানোর পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে৷ নিজেদের বিভাগে ফিরে যেতে শুরু করেন রোগীরা৷ হাসপাতাল সুপার গয়ারাম নস্কর বলেন, ‘‘বিদ্যুতের তারে আগুনের ফুলকি থেকে একটা গুজব ছড়িয়েছিল৷ আতঙ্কের জেরে দমকলও ছুটে আসে৷ তবে দ্রুতই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে৷’’