ইস্পাত কারখানায় হামলা। —নিজস্ব চিত্র।
জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জে ইস্পাত কারখানায় দুষ্কৃতী হামলার জেরে শঙ্কিত উত্তরবঙ্গের শিল্পমহলের একাংশ। চলতি মাসেই রাজ্য সরকারের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন (বিজিবিএস)। তার আগে এমন ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর। জারি রয়েছে পুলিশি তদন্ত।
রাজগঞ্জের মাঝিয়ালি গ্রাম পঞ্চায়েতের মগসুবা এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি শিল্প। সেখানকার একটি ইস্পাত কারখানা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, গত ৩১ মার্চ থেকে নানা উৎপাত চলছে কারখানা চত্বরে। শনিবার রাতের অন্ধকারে এক দল দুষ্কৃতী কারখানার জানালা এবং দরজা লক্ষ্য করে দেদারে ইট-পাথর ছোড়ে বলে অভিযোগ। কারখানার সিসি ক্যামেরাতেও ধরা পড়েছে সেই ছবি। শনিবার রাতে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ নিয়ে শুরু হয়েছে তদন্তও। রাজগঞ্জের ওই ঘটনা নিয়ে শঙ্কায় শিল্পমহল। উত্তরবঙ্গের শিল্পপতি তথা বণিকসভা সিআইআই-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান সঞ্জিত সাহার বক্তব্য, ‘‘গত ১০ থেকে ১১ বছর ধরে রাজ্যে শিল্পবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু এই ধরনের ঘটনা সেই ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে। সামনেই বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন রয়েছে। এই ধরনের ঘটনা তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। আমরা এ নিয়ে জলপাইগুড়ির জেলাশাসকের সঙ্গে আলোচনা করব।’’
রাজগঞ্জের ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতরও। জলপাইগুড়ির বিজেপি নেতা বাপি গোস্বামীর অভিযোগ, ‘‘এক এক জন তৃণমূল নেতার এক একটি সিন্ডিকেট চালান। তাদের তোলাবাজির জন্যই এটা হয়েছে। উত্তরবঙ্গে কোনও শিল্প নেই। পশ্চিমবঙ্গেও কোনও শিল্প নেই তোলাবাজির জন্য। সব শিল্প চলে যাচ্ছে বিজেপিশাসিত রাজ্যে।’’ যদিও রাজগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক খগেশ্বর রায়ের বক্তব্য, ‘‘আশপাশের এলাকায় বহু শিল্প তৈরি হচ্ছে। যে যার মতো শিল্প করতেই পারেন। কিন্তু এ কেউ শিল্পে বাধা বিপত্তি সৃষ্টি করলে তা আমরা মানব না। আমকে বিষয়টি কেউ জানালে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’’
ইস্পাত কারখানাটির সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে ঘণ্টা দুয়েক ধরে দুষ্কৃতীরা পাথরবৃষ্টি করে। সেই তাণ্ডবের দৃশ্য বন্দি হয়েছে সিসি ক্যামেরায়। পুলিশ সিসি ক্যামেরার ছবি ধরেই তদন্ত শুরু করেছে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সংস্থাটির মালিক। রাজগঞ্জ থানার আইসি পঙ্কজ সরকারের বক্তব্য, ‘‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তদন্ত শুরু হয়েছে। আজ বিকেলে এক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।’’
রাজগঞ্জের পঞ্চায়েত সদস্য সুভাষ রায় দাবি করেছেন, ‘‘সিসি টিভির ফুটেজ দেখেছি। এলাকার তিন যুবককে আমি চিনতে পেরেছি। তারা কেউ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। শান্ত এলাকাকে অশান্ত করতে কেউ চক্রান্ত করে ওদের দিয়ে এই ঘটনা ঘটাতেও পারে।’’