প্রতীকী ছবি
বর্ষবরণের রাত। শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকার একাধিক পানশালা, রেস্তরাঁ ছাড়াও বিভিন্ন হোটেল, রিসর্ট জুড়ে চলেছে নানা অনুষ্ঠান। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রতি বছরের অভিজ্ঞতা থেকে মদ্যপ সামলাতে বিকেল ৫টা থেকেই রাস্তায় ছিল পুলিশ। সাদা পোশাকের পুরুষ ও মহিলা পুলিশকর্মীরা পানশালা এবং অনুষ্ঠান স্থলগুলিতে নজর রাখার দায়িত্বে ছিলেন। সেই সঙ্গে গভীর রাত অবধি দৌড়েছে পুলিশের থানা ভিত্তিক ফ্লাইং স্কোয়াডও।
পুলিশের চিন্তার কারণ, উত্তরায়ণ, কাওয়াখালি উপনগরী ও মাটিগাড়ার সিটি সেন্টারের চত্বর। ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে যানজট ছাড়াও গত দুই বছর লাঠি হাতে নেশা করা তরুণ-তরুণীদের ভোরে বাড়ি পাঠাতে বেগ পেতে হয়েছিল পুলিশকে। এ বার তাই বিকেল থেকেই শুরু হয়েছে বিশেষ নজরদারি। মাঝরাতের মধ্যে এলাকাগুলি খালি করার প্রস্তুতি রয়েছে শিলিগুড়ি কমিশনারেটের।
শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার অথর্ব ত্রিপুরারি বলেন, ‘‘শহরবাসী উৎসবের মেজাজে আনন্দ উপভোগ করুন। নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে গোলমাল হলে কড়া হাতে সামলানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে প্রতিটি থানাকে।’’
কমিশনারেটের কর্তারা জানান, হোটেল, পানশালাগুলিতে সিসিটিভি ঠিকঠাক রাখার জন্য মালিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাই সেখানে গোলমাল হলে তার ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা থাকে। কিন্তু শহরের বিভিন্ন মাঠ, উপনগরীর খালি এলাকা এবং সিটি সেন্টারের চত্বরের সামনের অংশে সিসিটিভি নেই। প্রতিবার রাত ১২টা বাজতে না বাজতেই এই সব জায়গায় আড্ডা বসে যায়। গাড়িতে সাউন্ড সিস্টেম চালিয়ে বা বাইক-স্কুটি নিয়ে গোল করে বসে যায় লোকজন। অনেক সময়ই সেগুলি মদের আসরে পরিণত হয়। তার পরই শুরু হয় গোলমাল।
তাই এ বার রাত ১২টার পর বিভিন্ন মাঠে এবং ফাঁকা জায়গায় জমায়েত দেখলেই তা খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবার ভক্তিনগরের সেবক রোড, দুই মাইল, হিলকার্ট রোড, প্রধাননগরের জংশন, মাল্লাগুড়ি এবং এনজেপি চত্বরের কয়েকটি পানশালায় বাড়তি নজর থাকছে। পুরনো পুলিশ রেকর্ড অনুসারে এলাকাগুলিতে ৩১ ডিসেম্বর রাতে মারপিটের ইতিহাস রয়েছে। কমিশনারেটের কয়েক জন এসিপি পর্যায়ের অফিসার জানান, গত বছরও তরুণ-তরুণীদের বিভিন্ন মাঠ এবং উপনগরীগুলির খালি এলাকা থেকে বাড়ি পাঠাতে রীতিমতো ঘাম ছুটেছে। কয়েক জায়গায় তো লাঠি নিয়ে ভোর ৫-৬টা নাগাদ তাড়া পর্যন্ত করতে হয়েছে। সমতলের সঙ্গে যোগ দেন পাহাড় থেকে আসা বহু বাসিন্দা। সব মিলিয়ে ভিড় সামলাতে হিমশিম অবস্থা হয় পুলিশের।
ভ্যান, সাদা পোশাকের বাইরেও মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য অ্যান্টি রোমিয়ো স্কোয়াডও রয়েছে শিলিগুড়ি পুলিশের। পুলিশ সূত্রের খবর, মহিলা এবং পুরুষ কর্মীদের নিয়ে তৈরি স্কোয়াডগুলি শহরের বিভিন্ন রাস্তায় রাতভর ঘুরবে। বিশেষ করে, নেশা করে মহিলার উত্যক্ত করা রুখতে বা থানা থেকে নির্দিষ্ট এলাকার খবর পেলেই এলাকায় পৌঁছবেন ওই পুলিশকর্মীরা। এর বাইরে ট্র্যাফিক পুলিশের অফিসার, কর্মীদেরও বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় রাত ১০টার পর থেকে যানজট নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে রাত ১১টা থেকেই গাড়ি, বাইক চালকদের ‘ব্রেথ অ্যানালাইজার’ দিয়ে টেস্ট করানো হবে। মাত্রাতিরক্ত নেশা করা অবস্থায় ধরা পড়লেই জরিমানা এবং প্রয়োজনে গ্রেফতারও করা হতে পারে, জানিয়েছে পুলিশ।