জখম ঋত্বিক কুমার সিংহ। পাশে তার মা। —ফাইল চিত্র
স্কুলের তিন তলায় ক্লাসের জানলা দিয়ে পড়ে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখলেন কর্তৃপক্ষ। বুধবার হায়দরাবাদ থেকে নারায়ণ স্কুল গ্রুপের একটি প্রতিনিধি শিলিগুড়ি পৌঁছেছে ঘটনা বিস্তারিত খতিয়ে দেখতে। দলে রয়েছেন দুই জন ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হরিবাবু এবং সুরেন্দ্র নায়ডু। তাঁরা এ দিন স্কুলে যান। সেখানে ক্লাসের মধ্যে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ দেখেন। ঠিক কী ভাবে ঘটনাটি ঘটেছে, তা ফুটেজে দেখা গিয়েছে। স্কুলের তরফে পুলিশে ঘটনা নিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। নবম শ্রেণির যে ক্লাসে ঘটনা ঘটেছে, সেটিকে তদন্তের স্বার্থে তালা দিয়ে রাখা হয়েছে।
কী দেখা গিয়েছে ওই সিসিটিভি ফুটেজে? স্কুলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সোমবার ঘটনার সময়কার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, তখন টিফিন পিরিয়ড শেষ দিকে। টিফিনের সময় ক্লাসে এক শিক্ষকও ছিল। তিনি চলে যাওয়ার কয়েক মিনিট পর ঘটনা। ঋষভ আর্য ভারতী তখন ক্লাসে জানলার ধারে একটি বেঞ্চে বসেছিল। ওই জানলাটি কাচ ঢাকা, কিন্তু গ্রিল ছিল না। অন্য পড়ুয়ারাও তখন ক্লাসে রয়েছে। ঋষভের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ঋত্বিককুমার সিংহ দৌড়ে আসে। তার পরে কিছুটা তাল হারিয়ে তার সঙ্গে ঋষভের ধাক্কা লাগে বলে স্কুলের ওই সূত্রের দাবি। এর ফলে দু’জনেই জানলার উপরে গিয়ে পড়ে। স্কুলের ওই সূত্রের দাবি, ঋত্বিক জানলার কাচ সেখান দিয়ে বাইরে পড়ে যাচ্ছিল। ততক্ষণে ঋত্বিকের হাত ধরে ফেলে ঋষভ। স্কুলের দাবি, সিসিটিভি ফুটেজে এর পরে দেখা যায়, দু’জনেই বাইরে পড়ে যায়। স্টুডেন্টদের একাংশের অভিযোগ, ওই জানলার কাছে এসি মেশিন বসানো ছিল। এসি থেকে জল পড়ে পিছল হয়েও ছিল।
হরিবাবু বলেন, ‘‘আমরা ঘটনার পুরোদস্তুর খোঁজ নিচ্ছি। সিসিটিভি ফুটেজ দেখা হয়েছে। খেলার ছলে দৌড়ে গিয়ে ঋত্বিক বেঞ্চে বসে থাকা ঋষভকে ঠেলে। তাতে যে এমন বিপত্তি ঘটবে তা বুঝতে পারেনি। কোথাও কোনও খামতি রয়েছে কি না দেখা হচ্ছে।’’
পড়ুয়াদের একাংশ জানায়, ঋষভ যে জানলার কাছে বসেছিল সে দিকে মেঝের অংশ উঁচু। তাতে জানলা হাঁটু অনেকটা নিচ থেকেই শুরু হয়েছে। ফলে গ্রিল ছাড়া জানলার কাচ ভেঙে দু’জনে সহজেই বাইরে পড়ে যায়।
সিসিটিভি ফুটেজ দেখার পর দুপুরে ফুলবাড়ির নার্সিংহোমে গিয়েও জখম ঋত্বিকের সঙ্গে দেখা করেন প্রতিনিধিরা। তার চিকিৎসা ব্যবস্থা খুঁটিনাটি খোঁজখবর নেন। ঘটনা কী ভাবে ঘটল, তা নিয়ে ঋত্বিকের সঙ্গে কথাও বলেন। ঋত্বিক জানান, ‘‘কোনও ঝগড়া বা গোলমাল হয়নি। ঘটনার একটু আগে আমরা দু’জনে এক সঙ্গে টিফিন খেয়েছি। বাড়ি থেকে মা টিফিন দিয়েছিল।’’
চিকিৎসক জানিয়েছে, ঋত্বিকের হাতে চোট গুরুতর। তা সারতে সময় লাগবে।