ভয়াবহ বিপর্যয় সিকিমে। —ফাইল চিত্র।
ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে উত্তর সিকিম। বুধবার ভোরে মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে লোনক হ্রদ ফেটে হুড়মুড়িয়ে জল নেমে আসে। সিকিমে হড়পা বানের বিপর্যয়ের বলি অন্তত ১৪ জন। সিকিমের সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও ২২ জন সেনা জওয়ান-সহ অন্তত ১২০ জন নিখোঁজ। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বুধবার সকালে ২৩ জন জওয়ানের নিখোঁজ হওয়ার খবর মিলেছিল। তাঁদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত এক জন জওয়ানকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ওই জওয়ানের শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল বলে সেনা সূত্রে খবর।
উত্তর সিকিমের লোনাক হ্রদের উপর মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরেই বিপত্তি ঘটেছে। ভেঙে গিয়েছে সিকিমের চুংথাম বাঁধ। তাতেই অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গিয়েছে তিস্তার জলস্তর। নদীর তাণ্ডবে আশপাশের এলাকা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। পুজোর মুখে সিকিমে এই বিপর্যয়ের জেরে ঘুরতে যাওয়া বহু পর্যটক আটকে পড়েছেন প্রতিবেশী রাজ্যে। রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, বাংলার অন্তত দু’হাজার পর্যটক সিকিমে আটকে পড়েছেন। জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ। ফলে আপাতত অবরুদ্ধ ফেরার পথও। রাজ্য প্রশাসনের তরফে সিকিম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
বাস, ট্রেন এবং বিমান ভরে বাংলা-সহ দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে পর্যটকেরা বেড়াতে যান সিকিমে। প্রতি বার পুজোর মুখে সেই ভিড় আরও বাড়ে। তেমনই পর্যটকবোঝাই সিকিমে তিলধারণের জায়গা ছিল না হোটেল, অতিথি নিবাসে। কিন্তু বুধবার সকাল দেখল এক অন্য সিকিমকে। তিস্তায় হড়পা বানের জেরে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাকিয়ং, গ্যাংটক, নামচি এবং মঙ্গন জেলা। ভেসে গিয়েছে বহু সেতু। জলমগ্ন বাড়িঘর। কিছু জায়গায় জলের তোড়ে সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে পড়েছে বড় বড় বিল্ডিং। কাদাস্রোতের তলায় চাপা পড়ে রয়েছে বহু বসতি, রাস্তাঘাট, সেনাছাউনি। পরিস্থিতি জরিপ করে আগামী ৮ অক্টোবর পর্যন্ত পাকিয়ং, গ্যাংটক, নামচি এবং মঙ্গনের সমস্ত স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চালু করা হয়েছে একাধিক জরুরি পরিষেবার নম্বর।
সিকিম যাওয়ার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পথ ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক (সাবেক ৩১এ জাতীয় সড়ক) বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে বন্ধ রয়েছে শিলিগুড়ি থেকে সিকিমগামী যানবাহনের চলাচল। যার ফলে বহু যাত্রী, যাঁরা সিকিমে যাওয়ার জন্য নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমেছেন, তাঁরা স্টেশনেই আটকে পড়েছেন। তাঁদের জন্য রাতের খাবারের ব্যবস্থা করল রেল পুলিশ। যাত্রী সোমলতা বসু বলেন, ‘‘দুপুরের ট্রেনে এনজেপি স্টেশনে নেমে সিকিমের ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা জানতে পারি। আগামী কালের টিকিট কেটেছি। রাতটুকু স্টেশনে কাটিয়ে আগামীকাল ট্রেন । রাতের খাবারের বন্দোবস্ত করল রেল পুলিশ।’’ এনজেপির আরপিএফ আইসি এমডি সোহেব আলম খান বলেন, ‘‘যাত্রী, জওয়ান ও পর্যটকদের জন্য আমরা খাবারের আয়োজন করেছি। সিকিম যাওয়ার জন্য বহু মানুষ এখানে অপেক্ষা করছেন। তাঁদের সাহায্য করাটাই সেটাই আমাদের কর্তব্য।’’