বহুজাতিক সংস্থাকে হার মানিয়েছিলেন কেরলের জারা শেইখা। ওঁরা হয়তো যোগ্যতায় কেউই জারা শেইখা নন। কিন্তু, ওঁরা প্রত্যেকেই সেই হার না-মানা জেদ নিয়ে বেঁচে থাকেন। সেই লড়াইয়ে বেঁচে থাকতে কষ্ট হয়, তবুও পিছিয়ে যাননি কেউ। এমনই হার না-মানা রূপান্তরকামীদের নিয়ে এবার তৈরি হচ্ছে তথ্যচিত্র। কোচবিহারে ওই তথ্যচিত্রের কাজ শুরু হয়েছে।
কারা আছেন ওই তথ্যচিত্রে? আছেন বছর ২৫-এর ঈশ্বর চন্দ্র। ছোটবেলায় স্কুলে গেলেই সবাই তাঁর পিছু লাগত। ছাত্রছাত্রীরা তো বটেই, তাঁকে দেখলে হেসে উঠত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকেই। তার মধ্যেই কোনও ভাবে অক্ষর পরিচয় হয় ঈশ্বরের। কিছুটা লিখতেও শেখেন। সেটুকু নিয়েই তিনি লড়াই শুরু করেন। শীতল পাটি তৈরির কাজ শিখে নিজেই এখন স্বনির্ভর। তাঁর কথায়, “সবাই যদি একটু পাশে দাঁড়াত, হয়তো জীবনটা বদলে যেত।’’
আর-একজন শঙ্কর দাস। নিউ জলপাইগুড়িতে রেলে একটি অফিসে আংশিক সময়ের কর্মী তিনি। প্রতিনিয়ত জীবন যুদ্ধ তাঁরও। নিজের কর্মস্থলেও ‘হাসির খোরাক’ হয়ে থাকেন তিনি।
তাঁদের সঙ্গে তথ্যচিত্রে আছেন সুমি দাস। সুমি প্রায় সকলেরই পরিচিত। রূপান্তরকামীদের নিয়ে তিনি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তৈরি করেছেন। তাঁদের হয়েই লড়াই করেন দিনভর। এক সময় এই সুমি বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন।
সুমি দাসদের সেই সংস্থা ‘মৈত্রী সংযোগ সোসাইটি’র উদ্যোগেই এই তথ্যচিত্র তৈরি করা হচ্ছে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘অল্প জানা গল্পগুলো’। আধঘণ্টার ওই তথ্যচিত্রের পরিচালনা করছেন কলকাতার বালিগঞ্জের বাসিন্দা সুদর্শনা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “এর আগে রূপান্তরকামীদের নিয়ে বেশ কয়েকটি কাজ করেছি। এই কাজটি একেবারেই অন্যরকম। আগের কাজগুলি ছিল ব্যক্তিকেন্দ্রিক। এখানে সমষ্টিকে তুলে আনা হয়েছে। এই প্রত্যন্ত এলাকার রূপান্তরকামী মানুষদের শিক্ষা ও জীবিকায় সমস্যা কোথায়। এর থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজে বের করতে চেয়েছি এই তথ্যচিত্রের মাধ্যমে।”
দিন কয়েক আগেই সমকামী নিয়ে রায় দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সেই রায়ের পরে সামাজিক অবস্থা যে খুব-একটা বদলাবে না তা-ও প্রায় এঁরা সকলেই একবাক্যে স্বীকার করে নিলেন। তবে লড়াই চালিয়ে যেতে চান সকলে। সুমি বললেন, “শিক্ষা ও কাজ, দুই জায়গাতেই রূপান্তরকামীদের প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয়। কেন জানি না এমন কাউকে দেখলেই, অনেকেই তাচ্ছিল্য করতে শুরু করেন। মানুষ হিসেবে তাঁদেরকে মেনে নিতেই যেন চান না। অবশ্য সেই ধারণা পাল্টাতে শুরু করেছে। সে ক্ষেত্রে এই মানুষদের পাশে সকলেই যাতে দাঁড়ান, সেই লক্ষ্যেই এই তথ্যচিত্র।’’