উমার খোঁজে
দিনকয়েক আগের ঘটনা। আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের একটি গ্রামে গোপনে এক কিশোরীর বিয়ের আয়োজন চলছে বলে স্থানীয় আশাকর্মীর মারফত খবর পৌঁছল তাঁর কানে। আর দেরি করেননি তিনি। সঙ্গে সঙ্গে সেই এলাকায় ছুটে গিয়েছেন। যাওয়ার আগে খবর দিয়েছেন চাইল্ড লাইনকে। ফলে, আটকে গিয়েছে সেই বিয়ে।
এটা কোনও নতুন ঘটনা নয় রাখি গোপের জীবনে। চরম দারিদ্র থেকে উঠে আসা মেয়েটি এই ভাবেই কখনও নাবালিকা বিয়ে, কখনও পাচারের মুখ থেকে ফিরিয়ে আনেন অন্য মেয়েদের। কখনও আবার স্কুলছুটদের শিক্ষার অঙ্গনে পৌঁছে দিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পেশায় আলিপুরদুয়ার জেলা স্বাস্থ্য দফতরের অস্থায়ী কর্মী। আর নেশায় তিনি মানবীদরদী।
ফালাকাটার দেশবন্ধু পাড়ায় এক হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম রাখির। আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, তাঁর তিন কাকা কার্যত বিনা চিকিৎসায় মারা যান। রাখির কথায়, “আর্থিক অবস্থা ভাল না হলেও, লেখাপড়ায় আমরা কখনওই পিছিয়ে ছিলাম না। ঠাকুমার মুখ থেকে কাকাদের মৃত্যুর গল্প শুনেই ঠিক করেছিলাম, সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার উপর কিছু কাজ করব। ২০১২ সালে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে এইচআইভি প্রতিরোধে কাজ শুরু করি।” পরে আরেকটি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে গ্রামে গ্রামে মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কন্যাশ্রী ও সবলা বাহিনী গড়ে তোলেন তিনি। সেই বাহিনীকে সঙ্গে নিয়েই শুরু হয় তাঁর বাল্য বিবাহ বিরোধী অভিযান বা পাচার হওয়া নারী, কিশোরীদের ফিরিয়ে আনার কাজ।
২০১৯ সালে ডিস্ট্রিক্ট আশা ফেসিলিটেটর হিসেবে জেলা স্বাস্থ্য দফতরে অস্থায়ী চাকরিটি পান তিনি। কিন্তু মেয়েদের জন্য কাজ থেমে থাকেনি। বরং চাকরির পর এ কাজে তিনি সাহায্য পেতে শুরু করলেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তে থাকা আরও ৯৯৫ জন আশাকর্মীর। তাঁদের মারফত জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাল্য বিবাহের খবর মিলতেই পঞ্চায়েত প্রধান, ব্লক প্রশাসন ও চাইল্ড লাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তা বন্ধের ব্যবস্থা করেন। ‘ফিল্ড ভিজিটে’ গিয়ে পাচারের কথা শুনলেই পুলিশ-প্রশাসনের কাছে হত্যে দিয়ে পড়েন। এই কাজের জন্য ইতিমধ্যেই দিল্লি ও রাজ্যের একাধিক সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা তাঁকে সম্মানিত করেছে। রাখির কথায়, “জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই কাজ বন্ধ করতে পারব না।”
আলিপুরদুয়ার জেলার সিএমওএইচ গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “নারী, কিশোরী ও শিশুদের সুরক্ষায় রাখি যে ভাবে কাজ করে চলেছেন, তাতে আমরাও গর্বিত।”