মি়জ়োরামে সেতু-বিপর্যয়। ছবি- পিটিআই।
ঝাল্লু, জয়ন্ত, সুমনরা ও দিকেই কাজ করছিল। আচমকাই ভে়ঙে় পড়ল ব্রিজটা! চোখের সামনে ওদের উপর থেকে পড়ে যেতে দেখলাম। মিজ়োরাম থেকে ফোনে নির্মীয়মাণ সেতু ভেঙে পড়ার মুহূর্তের সেই দৃশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে গলা ধরে আসছিল প্রতাপ সরকারের। কাঁপা গলায় বলতে থাকেন, ‘‘এখনও চোখের সামনে ভাসছে ওই মুহূর্তটা। আমি কী ভাবে বেঁচে আছি, বুঝতে পারছি না।’’
প্রতাপ মালদহের ইংরেজবাজার ব্লকের বুধিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের নাগোরপাড়ার বাসিন্দা। গ্রামে কাজ না মেলায় বন্ধুরা দল বেঁধে মিজ়োরামে সেতু তৈরির কাজে গিয়েছিলেন। প্রতাপ জানান, রোজকার মতো বুধবারও সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ তাবু ছেড়ে সেতুর কাজ করতে যান তাঁরা। তাবু থেকে ১০০ মিটার দূরে তৈরি হচ্ছিল সেতুটি। ৭০-৮০ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন সেখানে। এর পর সকাল ১০টা ২০ মিনিট নাগাদ সেতুটি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। প্রতাপের কথায়, ‘‘চোখের সামনে সেতুটা ভেঙে পড়তে দেখেছি। মুহূর্তের মধ্যে এলাকাটা যেন মৃত্যুনগরী হয়ে উঠেছিল!’’
প্রতাপের সঙ্গে মি়জ়োরামে কাজ করতে গিয়েছিলেন তাঁরই গ্রামের বাসিন্দা ঝাল্লু সরকার, জয়ন্ত সরকার, রঞ্জিত সরকার, সুমন সরকার এবং নব চৌধুরীরা। তিনি সেতুর যে প্রান্তে কাজ করছিলেন, তার ঠিক উল্টো প্রান্তে ছিলেন ঝাল্লু, জয়ন্তরা। প্রতাপ বলেন, ‘‘ব্রিজ থেকে ওদের পড়ে যেতে দেখলাম। মুহূর্তের মধ্যে সব শেষ হয়ে গেল। ওদের পরিবারকে কী জবাব দেব! আমরা সব সময় একসঙ্গেই থাকতাম।’’
পঞ্চায়েত ভোটের পরেই মিজ়োরামে সেতু তৈরির কাজে গিয়েছিলেন চৌদুয়ামোড় গ্রামের মোজাফের আলি। তাঁর স্ত্রী আজিরা বিবি বলেন, ‘‘দু’বছর ধরে ও ভিন্রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করে। সকাল ১১টার নাগাদ খবর পাই যে, ব্রিজ ভেঙে গিয়েছে। স্বামীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জেলায় কাজ নেই। তাই বাইরে কাজ করে খেতে হবে। এখন কী হবে আমাদের!’’
মালদহ জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, মিজ়োরামে জেলার ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও নিখোঁজ অনেকে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মালদহের জেলাশাসক নিতিন সিংহানিয়াকে যথাযথ পদক্ষেপ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নবান্ন থেকে। নিতিন বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি আমরা। মৃতদের একটি তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে।’’ সেতু-বিপর্যয়ে মালদহের রতুয়া-২ ব্লকের বেশ কয়েক জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলেই খবর জেলা প্রশাসন সূত্রে। পুখুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা ওই শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন অতিরিক্ত জেলাশাসক বৈভব চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে মৃতদের দেহ আনতে যা যা করার, সব করা হচ্ছে। আমাদের জেলাশাসক মিজ়োরামের ওই এলাকার জেলাশাসকের সঙ্গে কথাও বলেছেন।’’