Diesel Engine Abandoned

গতিহীন ইঞ্জিনে বসতির দিনলিপি

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:৩৬
Share:

অনাদরে পরে রয়েছে ডিসেল ইঞ্জিন। নিজস্ব চিত্র।

ক’দিন আগেও ভারী ব্যস্ততা ছিল, দিন নেই রাত নেই ছুটোছুটি ছিল। গমগমে মেজাজে সচল থাকলে ধারেকাছে কেউ ঘেঁষে সাধ্য কার ছিল!

Advertisement

এখন আর ‘ডিউটি’ নেই, সপ্তাহখানেক ধরে স্টেশনের এক পাশে এনে রেখে দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ এসে রাশি রাশি ভেজা পোশাক তাদের গায়ে ঝুলিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছেন রোদে শুকোতে, কচিকাচারা ভয়ডর ফেলে তরতরিয়ে উঠে যাচ্ছে মাথায়। এই তো সে দিনও হুইসেল বাজিয়ে তির বেগে ছুটে যেতে দেখে শহর-গ্রামের গবাদি পশুরা ভয়ে রেললাইনের আশেপাশ থেকে ছুটে পালাত। এখন গবাদি পশুও বেঁধে রাখা গতিহীন তার চাকায়।

জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশনের একপাশে দাঁড় করিয়ে রাখা আটটি আধুনিক ডিজেল ইঞ্জিনের ‘দিন কাটছে’ এ ভাবেই।

Advertisement

জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশনে পৌঁছে কয়েক দিন থাকার পরে ‘ডিউটি-হীন’ সে সব ইঞ্জিন ‘সঙ্গী’ হয়েছে এলাকার দিনযাপনের। টাউন স্টেশনের পাশেই কলোনি। সকালে কলোনির কলপাড়ে জামাকাপড় কেচে, স্নানের পরে ভেজা পোশাক মেলে দেওয়া হচ্ছে পরপর দাঁড়ানো ডিজেল ইঞ্জিনের গায়ে। কারও বাড়িতে কুলের আচার হবে, বেতের ডালা ভরা পাকা কুল ইঞ্জিনের সিঁড়িতে বা কার্নিশে রেখে দেওয়া হল রোদে শোকানোর জন্য। বেলা গড়াতে কচিকাচার দল ইঞ্জিনের গায়ে উঠে নানা খেলায় মাতল। ইঞ্জিনের গায়ে কোথাও গোবর ঠেসা, ঘুঁটে হবে বলে।

রবিবার দুপুরে দেখা গেল ইঞ্জিনের নীচে এক সন্তানসম্ভবা ছাগলকে প্রসব করানো হচ্ছে। গরু, ছাগল বেঁধে রাখা ইঞ্জিনের থেমে থাকা চাকায়। অলস দুপুরে ইঞ্জিনের হাঁটাচলা করার অংশে কেউ শুয়ে রয়েছেন, কেউ পা ঝুলিয়ে মোবাইলের স্ক্রিনে ব্যস্ত। রাতে ইঞ্জিনের গায়ে হেলান দিয়ে আলো জ্বেলে তাস-নেশার ‘আসরও’ বসছে।

পর পর আটখানা ডিজেল ইঞ্জিন শহরের রাস্তার পাশের রেললাইনে দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে রয়েছে, দেখতে মাঝেমধ্যে ভিড় জমছে কৌতুহলীদের। তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, “ইঞ্জিনগুলির প্রতি ভারী অবহেলা হচ্ছে।” রেল সূত্রের খবর, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের বেশিরভাগ অংশেই ওভারহেড বিদ্যুৎ সংযোগ হয়েছে। বিদ্যুৎচালিত ইঞ্জিন জুড়েছে অধিকাংশ ট্রেনে। সে কারণেই এই ডিজেল ইঞ্জিনগুলির দিন ফুরিয়েছে। নিউ জলপাইগুড়িতে জায়গার অভাব হওয়ায় জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশনে এনে সে সব রাখা হয়েছে।

জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশনের পাঁচ নম্বর লাইনে পর পর দাঁড়িয়ে থাকা আটটি ইঞ্জিন ‘ডব্লুডিজি ৪’ সিরিজ়ের। ভারতীয় রেলের অন্যতম শক্তিশালী এবং আধুনিক ইঞ্জিন বলে পরিচিত। যে ইঞ্জিনগুলিকে রাখা হয়েছে, সেগুলি উত্তরবঙ্গ, অসম এবং বিহারের বিভিন্ন এক্সপ্রেস এবং প্যাসেঞ্জার ট্রেন টেনে নিয়ে যেত। কোনও কোনও ইঞ্জিন নিয়মিত নির্দিষ্ট সময়ে ২৯টি ট্রেনও টেনেছে। তা হলে জলপাইগুড়ি স্টেশনে এনে দিনের পর দিন দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে কেন?

উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনলংযোগ আধিকারিক কপিঞ্জল কিশোর শর্মা বলেন, “খোঁজ নেব।” এলাকারই বাসিন্দা, বিজেপির জেলা নেতা শ্যাম প্রসাদের কথায়, “ইঞ্জিনে নিয়মিত কাপড় মেলা হচ্ছে, দেখে ভারী কষ্ট হয়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement