স্কুলে এই রং করানো নিয়েই বিতর্ক। — নিজস্ব চিত্র।
সরকারি বিদ্যালয়কে রাঙিয়ে দেওয়া হল গেরুয়া রঙে। আর তাতেই শুরু জোর বিতর্ক। ঘটনাস্থল মালদহের ইংরেজবাজারের যদুপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের কমলাবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। যদিও তাতে থেমে নেই রাজনীতির আকচাআকচি।
কমলাবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রং নিয়ে বেধেছে বিতর্ক। স্কুলের রং কেন রাতারাতি গেরুয়া করে দেওয়া হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন রাজ্যের শাসকদলের নেতারা। অন্য দিকে, গেরুয়া রংকে জাতীয়তাবাদের প্রতীক হিসাবে চিহ্নিত করে এই কাজের নেপথ্যে যাঁদের হাত রয়েছে, তাঁদের গৈরিক অভিনন্দন জানিয়ে ফেলেছে স্থানীয় বিজেপি। যথারীতি চলছে রাজনৈতিক তরজাও।
গেরুয়া রং নিয়ে মালদহ জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি বাসন্তী বর্মণ জানিয়েছেন, তাঁদের অনুমতি নিয়ে স্কুলকে গেরুয়ায় রাঙানো হয়নি। তাঁর দাবি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেই এই রং করেছেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই শিক্ষক, শিক্ষিকারা মনে করেছেন, হালকা রং হলে বর্ষাকালে অসুবিধা হয়। প্রয়োজন গাঢ় রং। তাই গেরুয়া রং করা হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে দাবি, রঙের কাজ করানোর ক্ষেত্রে স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষিকারা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে রং করিয়েছেন।
এ বিষয়ে তৃণমূল মুখপাত্র আশিস কুণ্ডু বলেন, ‘‘কেন্দ্রের বিজেপি সরকার সমস্ত কিছুই গৈরিকীকরণের চেষ্টা করছে। বিশ্বকাপে গেরুয়া পোশাক পরিয়ে ভারতকে হারানো হয়েছে। ঠিক সেই রকমই শিক্ষাব্যবস্থার গৈরিকীকরণের চেষ্টা করছে বিজেপি। এই সমস্ত ঘটনায় বিজেপির মুখ পুড়ছে, তাও লজ্জা নেই!’’ রং করেছেন যাঁরা, তাঁদের গৈরিক অভিনন্দন জানিয়েছে বিজেপি। বিজেপির দক্ষিণ মালদহ সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক অম্লান ভাদুড়ি বলেন, ‘‘গেরুয়া রং ভারতবর্ষের সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। আমরা মহাভারত থেকে আরম্ভ করে আর্য সভ্যতা থেকে ভারতবর্ষের রং হিসাবে গেরুয়াকেই জানি। গেরুয়া রং শান্তির প্রতীক, ত্যাগের প্রতীক। এই রং নিয়ে তৃণমূল রাজনীতি করছে, এটাই নিন্দনীয়।’’
স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, যে হেতু বিদ্যালয়টি কমলাবাড়ি এলাকায় অবস্থিত এবং স্কুলটির নাম কমলাবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তাই নামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কমলা রং করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজনীতি বিবেচ্য ছিল না। কিন্তু কে শোনে কার কথা! তৃণমূল যেমন রং করার পিছনে বিজেপির হাত দেখছে, তেমনই এই রং করানোর ভাবনা যাঁদের মাথা থেকে বেরিয়েছে, তাঁদের গৈরিক অভিনন্দন পর্যন্ত জানিয়েছে ফেলেছে বিজেপি। সব মিলিয়ে রঙের পিছনে রাজনীতি নেই বলে যতই দাবি করা হোক, রাজনীতির বল কিন্তু গড়ানো শুরু করে দিয়েছে পুরোদমে।