Maynaguri

‘কার হাতে দিয়ে যাব এ সাধনা!’

গত বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে মঙলাকান্তির জীবনযাত্রা বদলে গিয়েছে। বয়সের কারণে বিশেষ বাড়ি থেকে বের হন না। সারাদিন বাড়িতেই থাকতেন।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

ময়নাগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:০৩
Share:

মঙলাকান্তি রায়। নিজস্ব চিত্র

সারিন্দার তিনটি তারের মধ্যে একটি প্লাস্টিকের সুতো। বেশি দাম দিয়ে ধাতব তার কেনার সাধ্য নেই, তাই শক্ত করে প্লাস্টিকের সুতো বেঁধে নিয়েছেন। তাতেই দিব্যি সুর উঠছে। কুড়িয়ে আনা কাঠ দিয়ে নিজের হাতে তৈরি করেছেন সারিন্দা। জরাজীর্ণ বাড়ির সামনের এক ফালি উঠোনে বসে শতবর্ষ পেরনো মঙলাকান্তি রায় থেমে থেমে বললেন, “সারা জীবন ধরে যে বাজনা শিখলাম, তার সবটুকু কাকে দিয়ে যাব? এখন তো কেউ সারিন্দা শিখতেই আসে না।”

Advertisement

গত বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে মঙলাকান্তির জীবনযাত্রা বদলে গিয়েছে। বয়সের কারণে বিশেষ বাড়ি থেকে বের হন না। সারাদিন বাড়িতেই থাকতেন। কেউ কেউ কখনও সখনও সারিন্দা শুনতে বাড়িতে আসতেন। এখন অবশ্য তাঁর উঠোন-ভরা লোক। পদ্ম-পুরস্কার প্রাপ্তির ঘোষণা হওয়ার পর থেকে শুরু হয়েছে সংবর্ধনার পালা। আসছেন সরকারি আধিকারিকেরা, বিভিন্ন ক্লাব, স্কুলের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার আমন্ত্রণ পাচ্ছেন। টিন, দরমার বেড়া দিয়ে তৈরি ভাঙাচোরা বাড়ি দেখে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, কেন প্রধানমন্ত্রী আবাস প্রকল্পে সরকারি ঘর পেলেন না মঙলাকান্তি?

সে সব নিয়ে কথা বলতে নারাজ প্রবীণ সারিন্দাবাদক বলছেন, “ও সব থাক। ও সব নিয়ে বললে নিন্দামন্দ হয়ে যাবে। সকলেই তো সব জানে। কার কাছে ঘর চাইতে যাব বলুন তো?” যদিও সরকারি সূত্রের খবর, একটি সরকারি প্রকল্পে বছর কয়েক আগে বাড়ি তৈরির জন্য মঙলাকান্তির নাম এসেছিল। সে সময় সারিন্দাবাদক তাঁর নামে আসা ঘর এক ছেলেকে দিয়েছেন।

Advertisement

ময়নাগুড়ির থেকে ধূপগুড়ি যাওয়ার জাতীয় সড়ক থেকে নেমে, অনেকটা পথ পেরিয়ে মঙলাকান্তির গ্রাম ধওলাগুড়ি। কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে পৌঁছতে হয় গ্রামে। অভাবের কারণে স্কুলে পড়া হয়নি। ছোটবেলায় দোতারার সুর শুনে গান ভালবেসেছিলেন। বাবার মৃত্যুর পরে, হাটে কাজের খোঁজে যেতেন। হাটেই প্রথম সারিন্দা দেখতে পান। দাম ছিল পাঁচ টাকা। কাজ করে পাওয়া টাকা দিয়ে সারিন্দা কিনেছিলেন। যিনি বিক্রি করেছিলেন, তাঁর কাছেই বাজানোর তালিম পান। মঙলাকান্তি বলেন, “সেই যে সুরের নেশা লাগল, আজও ছাড়েনি। তার পরে, কাজকর্ম আর হয়নি। বাজনা শুনে কেউ ধান দিত, কেউ ফল দিত, সে সব খেয়েই পেট চলেছে।”

ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত পাখির যেমন ডাক শোনা যায় মঙলাকান্তি হুবহু সারিন্দায় সেই সব শোনাতে পারেন। মুরগির ডাক থেকে কান্নার আওয়াজও পারেন। শিল্পী বলেন, “সারিন্দার সুর বড় করুণ।” পুরস্কার পাওয়ার খুশি ছাপিয়ে একটাই আক্ষেপ তাঁর মুখে, “বয়স হলে সব বিদ্যাই কাউকে শিখিয়ে যেতে হয়। এখন কেউ সারিন্দা শেখেই না। কার হাতে দিয়ে যাব এ সাধনা!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement