পায়ে-পায়ে: কৃষি আইন প্রত্যাহার করার ঘোষণায় শুক্রবার সন্ধ্যায় বালুরঘাট শহরে বিজয় মিছিল করল সিপিএম। নিজস্ব চিত্র।
‘চাটাই বৈঠক’ থেকে ‘শুনন চাষি ভাই’, এমনই একাধিক কর্মসূচির মাধ্যমে কেন্দ্রের নতুন কৃষি আইনের ভালদিক নিয়ে বোঝাতে কৃষকদের ‘দুয়ারে’ পৌঁছে গিয়েছিল গেরুয়া শিবির। বিধানসভা ভোটে মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুরের কৃষি প্রধান কেন্দ্রগুলিতে সেই বোঝানোর সুফলও মিলেছ বলে দাবি গেরুয়া শিবিরের নেতৃত্বদের। শুক্রবার, প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রের বিতর্কিত সেই কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করতেই হতাশ সঙ্ঘ পরিবার। এমনকী, আড়ালে-আবডালে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার বিরোধিতাও করেছেন সঙ্ঘের বহু নেতৃত্বই। যদিও এই ইস্যুতে চুপ বিজেপির নেতারা। তবে সুর চড়িয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুরের তৃণমূল নেতৃত্ব। বামেরাও নানা এলাকায় ‘বিজয় মিছিল’ করেছেন। এ দিন মালদহে ধানের শিষ হাতে নিয়ে ঢাক বাজিয়ে ‘বিজয় উৎসব’ পালন করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদও।
অত্যাবশক পণ্য, কৃষি পণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন, কৃষক সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন— এই তিনটি আইন পাশ করে কেন্দ্র সরকার। কেন্দ্রের এই নয়া আইনের বিরুদ্ধে গত এক বছর ধরে দিল্লিতে ধর্না-বিক্ষোভ চালাচ্ছিলেন কৃষকেরা। এই আইন নিয়ে ধোঁয়াশায় ছিলেন মালদহ ও দিনাজপুরের কৃষকেরাও। তাঁদের ধোঁয়াশা কাটাতে বিজেপির পাশাপাশি আসরে নামে সঙ্ঘ পরিবারও।
গেরুয়া শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘চাটাই বৈঠক’ থেকে শুরু করে ‘শুনুন চাষি ভাই’য়ের মতো কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। কৃষকদের দুয়ারে গিয়ে আইনের সুফল নিয়ে বোঝানো হয়েছিল, দাবি সঙ্ঘের নেতাদের। এমন অবস্থায় আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। তাতেই হতাশ হয়ে পড়েছেন সঙ্ঘের নেতাদের বড় অংশ। মালদহের সঙ্ঘের কৃষি বিষয়ক জেলা সভাপতি গুপ্তেশ্বর চৌধুরী বলেন, ‘‘কৃষি আইনে কৃষকদের সুবিধেই হবে। বড় অংশের কৃষকেরা আইনকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিছু সংখ্যক কৃষকের চাপে আইন প্রত্যাহারের ঘটনায় আমরা দুঃখিত।’’
আইন প্রত্যাহারের ঘটনায় ব্যাকফুটেও পড়তে হবে বলে দাবি করেন সঙ্ঘের বহু নেতাই। ঘটনায় কোনও মন্তব্য করতে চাননি হবিবপুরের বিজেপি বিধায়ক তথা সঙ্ঘ পরিবারের সদস্য জোয়েল মুর্মূ। দক্ষিণ দিনাজপুরের বিজেপির সাধারণ সম্পাদক স্বরূপ চৌধুরী বলেন, ‘‘এই আইন বাতিলে রাজ্যে কোনও প্রভাব পড়বে না।’’
তবে আসরে নেমে পড়েছে তৃণমূল। এ দিন মালদহ কলেজের সামনে হাতে ধানের শিষ নিয়ে ঢাক বাজিয়ে বিজয় উৎসব পালন করেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বরা। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি প্রসূন রায় বলেন, ‘‘অবশেষে কৃষকদের চাপে পিছু হটল কেন্দ্র।’’
সিপিএমের মালদহ জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, ‘‘এই জয় কৃষকদের জয়। তাঁদের আন্দোলনের জয়। কেন্দ্রীয় সরকার নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে, আইন প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আগামী দিনে গণ আন্দোলনের চাপে এমন আরও অনেক জনবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে ডিগবাজি খেতে হবে।’’
(তথ্য: অভিজিৎ সাহা ও নীহার বিশ্বাস)