চাঁচলের মাঠে ভোজসভার চিহ্ন। —নিজস্ব চিত্র।
মনোনয়নের দিনই নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের অভিযোগ উঠল মালদহের মালতীপুরের আরএসপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে। বিধি ভেঙে ভোটারদের প্রভাবিত করতে তাঁদের পেটপুরে খাওয়ানো হয়েছে বলে আরএসপি প্রার্থী আব্দুর রহিম বক্সির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের কাছে নালিশ করেছে কংগ্রেস ও তৃণমূল। সোমবার চাঁচল মহকুমাশাসকের দফতরে মনোনয়ন জমা করতে যান আরএসপি প্রার্থী। মানিকনগর থেকে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করে মহকুমাশাসকের দফতরে পৌঁছন তিনি। তারপরেই ওই ভোটারদের জন্য চাঁচল কলেজ হস্টেল মাঠে ভুরিভোজের আয়োজন করা হয়। সেখানে অস্থায়ী একটি হোটেল খুলে তার আড়ালে প্রায় পাঁচ হাজার ভোটারের খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করা হয় বলে অভিযোগ। যদিও ভোটারদের খাওয়ানোর কথা অস্বীকার করেছেন আরএসপি প্রার্থী। অভিযোগ পেয়েই প্রশাসনের নির্দেশে এলাকায় যান নির্বাচন কমিশনের কর্মীরা। যদিও তারা গাড়ি থেকে নেমে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ দূরের কথা, গাড়ির ভিতর থেকেই ছবি তুলে ফিরে যান বলেও অভিযোগ উঠেছে।
মালতীপুরের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও যেখানে ভুরিভোজের আয়োজন করা হয়েছিল, সেই এলাকাটি চাঁচল বিধানসভার আওতায়। মালতীপুর কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার দেবব্রত বিশ্বাস বলেন, ‘‘যা বলার চাঁচলের রিটার্নিং অফিসার বলবেন।’’ চাঁচলের রিটার্নিং অফিসার তথা মহকুমাশাসক পুষ্কর রায় বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ পেয়েই নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের এলাকায় পাঠানো হয়েছিল। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ গাড়ি থেকে না নেমে ছবি তুলে কর্মীদের ফিরে গিয়েছেন বলে কংগ্রেস ও তৃণমূলের অভিযোগ প্রসঙ্গে রিটার্নিং অফিসার বলেন, ‘‘ছবিগুলোই তো আমাদের দরকার। ওই ছবির ভিত্তিতেই তদন্ত হবে।’’
এ দিন, সকাল ১১টা থেকেই চাঁচল মহকুমাশাসকের দফতরে মনোয়নয়ন জমা করার পর্ব শুরু হয়। চাঁচল, মালতীপুর, হরিশ্চন্দ্রপুর, রতুয়ার চার তৃণমূল ও চার বিজেপি প্রার্থী ছাড়াও মনোনয়ন জমা দেন হরিশ্চন্দ্রপুরের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী-সহ মালতীপুরের আরএসপি প্রার্থীও! কিন্তু ধারেভারে এদিন আরএসপির মিছিল ছিল নজরকাড়া। কয়েক হাজার মানুষের মিছিলের সামনে ছিল ধামসা-মাদল নিয়ে আদিবাসী মহিলাদের নাচ। আরএসপির মিছিলে দুপুরের পর থেকেই গোটা শহর কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। কয়েকশো ভুটভুটি আর ছোট গাড়ি, ম্যাক্সিতে চেপে আরএসপি প্রার্থীর মিছিলে যোগ দিতে আসেন তাঁরা।
কংগ্রেস ও তৃণমূলের অভিযোগ, আরএসপি প্রার্থী মহকুমাশাসকের দফতরে ঢুকে যাওয়ার পরেই কলেজ হোস্টেল মাঠে জড়ো হন বাসিন্দারা। সেখানে মাঠের একপ্রান্তে আমবাগানে অস্থায়ী ছাউনি দেওয়া হোটেলে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হয়েছিল। পাশেই বড়বড় চুল্লিতে করা হয়েছিল রান্নার আয়োজন। ছাউনির সামনে ছিল বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে একাধিক লাইন। দুপুর থেকেই সেখানে প্লেট হাতে লাইন দিয়ে খাওয়ার নেওয়ার ভিড় জমে যায়। বিনে পয়সায় খাবার দেওয়া হচ্ছে বলে জানালেও, কে খাওয়াচ্ছে তা নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি বাসিন্দারা।
ওই হোটেলে খাওয়ার বন্দোবস্ত করেছিলেন মোবেদ আলি। তাঁর দাবি, ‘‘বিনে পয়সায় কেন খাওয়াব! মিল সিস্টেমে ৫০ টাকায় পেট পুরে খাওয়ানোর জন্য হোটেল খুলেছি। এক সঙ্গে ৫০ থেকে ১০০ জনের টাকা নিয়ে স্লিপ দেওয়া হচ্ছে। তাদেরকেই মাইকে ডেকে খাবার দেওয়া হচ্ছে।’’
চাঁচল-২ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি মানজারুল ইসলামের অবশ্য অভিযোগ, ‘‘ওখানে লোক দেখানো হোটেল খুলে আরএসপি প্রার্থীই ভোটারদের প্রভাবিত করতে তাদের খাইয়েছেন। আমাদের কর্মীরাও সেখানে গিয়েছিল। তাদের কাছেই শুনেছি। অভিযোগ পেয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরা ওখানে গেলেও গাড়ি থেকে নামেননি। আমরা চাই যথাযথ তদন্ত হোক।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মালতীপুরের তৃণমূল প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেনও বলে, ‘‘উনি যা করেছেন তাতে নির্বাচনী বিধি ভেঙেছেন।’’
যদিও আরএসপি প্রার্থী আব্দুর রহিম বক্সি বলেন, ‘‘কোথায় কোন হোটেলে কে খাইয়েছে, তা আমি জানি না! বাসিন্দারা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আমার সঙ্গে এসেছিলেন। কিন্তু আমি কাউকে খাওয়াতে যাব কেন? আমাদের মিছিল দেখে বিরোধীরা ভয় পেয়ে মিথ্যে অভিযোগ তুলছে।’’