ধূপগুড়ি কাণ্ডর তদন্ত কে করবে ঘটনার ২১ দিন পরেও তা নিয়ে টানাপড়েন চলছে।
রবিবার ওই কাণ্ডে নিহত ছাত্রীর আত্মীয়-স্বজনেরা জেনেছেন, ওই গণধর্ষণ ও খুনের মামলার তদন্তের দায়িত্ব ধূপগুড়ি থানাকে হস্তান্তরের জন্য সম্প্রতি জলপাইগুড়ি আদালতে আর্জি জানিয়েছে রেল পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে মূল তদন্তটি ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ধূপগুড়িতে ১ সেপ্টেম্বর একটি সালিশি সভা বসার পরে, ওই সভায় নিগৃহীত দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিবস্ত্র দেহ তার পরের দিন রেললাইনের ধার থেকে উদ্ধার করা হয়। সেই সময়েই ধূপগুড়ি থানা দেহটি রেললাইনে মিলেছে যুক্তি দেখিয়ে ওই থানায় মামলা দায়ের করেনি। ফলে, এখন ধূপগুড়ি থানা আদালতে রেলপুলিশের আবেদনের বিরোধিতা করতে পারে বলে আশঙ্কা ওই ছাত্রীর পরিবারের লোকজনদের। এই টানাপড়েনে আখেরে মামলার তদন্তই যে হোঁচট খেতে পারে, সে কথা পুলিশ মহলের অনেকেও মানছেন। শিলিগুড়ির রেল পুলিশ সুপার দেবাশিস সরকার বলেছেন, “বিষয়টি এখন বিচারাধীন। তা নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।” জলপাইগুড়ির এসপি কুণাল অগ্রবাল জানান, আদালত নির্দেশ দিলে তা মেনে পদক্ষেপ করবেন। তিনি বলেন, “আমরা তো গোড়া থেকে তদন্তে সহযোগিতা করছি। আগামী দিনেও করব।
আদালত সূত্রের খবর, রেল পুলিশ জানিয়েছে, যে অভিযোগ জমা পড়েছে তাতে সালিশি সভা থেকে নিগ্রহ, অনেক কিছুই ধূপগুড়ি থানা এলাকায় হয়েছে। বিশেষত, ওই অভিযোগপত্রে যাঁর বাড়ির সামনে সালিশি সভা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে, তা ধূপগুড়ির থানার আওতায় পড়ে। সালিশি সভায় নিহত ছাত্রীকে চুলের মুঠি ধরে যে মহিলা মারধর করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে, সেই প্রতিমা বর্মনের বাড়িও ধূপগুড়ি থানায়। যদিও অভিযোগপত্রে নাম থাকলেও রেল পুলিশের তরফে যে এফআইআর নথিভুক্ত হয়েছে তাতে প্রতিমাদেবীর নাম নেই। ফলে, রেল পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
যদিও রেল পুলিশের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, তদন্তে নেমে ধূপগুড়ি থানার উপরে অনেকটাই নির্ভর করতে হয়েছে। এমনকী, অনেক ক্ষেত্রে ধূপগুড়ি থানা যেমন বলেছেন, সেই মতো পদক্ষেপও করতে হয়েছে বলে রেলের একাধিক অফিসার দাবি করেছেন। তবে ধূপগুড়ি থানার অফিসারদের কয়েকজন দাবি করেছেন, রেলের অফিসাররা দেহটি রেললাইনে পাওয়া গিয়েছে বলে নিজেরাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছিলেন। তবে এখন মামলা নিয়ে নানা মহলের চাপ বাড়ায় রেল পুলিশের একাংশ দায়িত্ব এড়াতে তত্পর হয়ে উঠেছেন বলে জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশের একাংশের সন্দেহ।
কোন প্রেক্ষাপটে কী ঘটেছিল ধূপগুড়িতে তা একঝলকে দেখা যাক। গত ১ সেপ্টেম্বর রাতে ধূপগুড়িতে তৃণমূল কাউন্সিলার নমিতা রায়ের স্বামী একটি সালিশি সভা ডাকেন। বিষয়, ‘পাওয়ার টিলার’-এর ভাড়া বকেয়া রাখা। অভিযোগ, ছাত্রীটির বাবা বকেয়া মেটাচ্ছিলেন না। তা নিয়ে আলোচনার সময়ে একতরফা ভাবে তার বাবার উপরে জরিমানা চাপানো হচ্ছে এই অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ করেছিল দশম শ্রেণির ছাত্রীটি। সেই সময়ে তাকে সভাতেই মারধর করা হয়। বড়দের মুখের উপরে কথা বলার ‘অপরাধে’ থুতু ফেলে চাটানোর ফতোয়া দেওয়া হয় সালিশি সভায়। ছাত্রীটি প্রতিবাদ করে সভা ছেড়ে অদূরে নিজেদের বাড়িতে চলে যায়।
সেই সময়ে কয়েকজন তাকে ধাওয়া করে বলেও অভিযোগ। কিছুক্ষণ পরে ছাত্রীর বাবা-মা বাড়িতে ফিরে মেয়ের চটি দেখতে পান। কিন্তু মেয়েতে পাননি। মঙ্গলবার ভোরে বাড়ি থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে রেল লাইনের ধারে ছাত্রীটির বিবস্ত্র দেহ মেলে। লাইনের মধ্যে একটি হাত পড়ে ছিল। ওই ঘটনার পরে ছাত্রীর বাবা ধূপগুড়ি থানায় গেলে পুলিশ রেল পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দেয়। রেল পুলিশ ছাত্রীর বাড়ির লোকজনকে ধূপগুড়ি থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়। দিনভর টানাপড়েন চলে। বিকেলের দিকে রেল পুলিশ অভিযোগ জমা করে। মামলায় তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামী সহ ১৩ জনের নামে এফআইআর হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৭ জন গ্রেফতার হয়েছেন। ধূপগুড়ি পুলিশের কয়েকজনের দাবি, তারাই খুঁজে পেতে অভিযুক্তদের ধরে দিয়েছেন। রেল পুলিশের একাংশের পাল্টা অভিযোগ, ধূপগুড়ি থানার কয়েকজন গোড়া থেকেই দায় এড়াচ্ছেন বলে মামলার তদন্ত ঠিকঠাক এগোচ্ছে না।