কোচবিহারে বিক্ষোভে অগ্নিমিত্রা পাল-সহ বিজেপির নেতৃত্ব এবং কর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র।
কোচবিহারের মাথাভাঙায় বিজেপির সংখ্যালঘু নেত্রীকে বিবস্ত্র করে মারধরের ঘটনায় এ বার নতুন অভিযোগ করলেন বিজেপি বিধায়ক তথা ওই দলের মহিলা মোর্চার নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল। তাঁর অভিযোগ, মহিলা কর্মীকে মারধর এবং হেনস্থায় শুধু মহিলারাই নন, জড়িত ছিলেন পুরুষেরাও। সিবিআই তদন্তের দাবি করে তিনি শাসকদলকে একহাত নিয়েছেন। অন্য দিকে, তৃণমূল তাদের দাবিতে অটল। তাদের দাবি, একটি পারিবারিক ঘটনাকে রাজনীতির রং দিতে চাইছে বিজেপি।
নির্যাতিতা নিজে বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার জেলা কমিটির সদস্যা। অভিযোগ, মাথাভাঙার রুইডাঙা এলাকায় তিনি মাঠে ছাগল চরাতে গিয়েছিলেন। সেই সময় তাঁকে গালিগালাজ করে মারধর করেন কয়েক জন মহিলা। এমনকি, তাঁকে বিবস্ত্র করেও পেটানো হয়। এ নিয়ে ঘোকসাডাঙা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়েরের পর চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এখনও পুলিশি তদন্ত চলছে।
ওই ঘটনার পর শনিবার ওই নির্যাতিতা মহিলার সঙ্গে দেখা করতে কোচবিহারে আসে বিজেপির বিশেষ প্রতিনিধি দল। অগ্নিমিত্রার নেতৃত্বে তারা কোচবিহার পুলিশ লাইন চৌপতিতে গিয়ে পথ অবরোধ করে। বেশ কিছু ক্ষণ পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সঙ্গে ওই প্রতিনিধি দল দেখা করে। তার পরে নির্যাতিতার সঙ্গেও কথা বলেন অগ্নিমিত্রারা। তাঁর সঙ্গে দেখা করার পর অগ্নিমিত্রা বলেন, ‘‘নির্যাতনের সময় সেখানে যেমন মহিলারা ছিল, তেমনই পুরুষরাও ছিল। নির্বাচনের ফলঘোষণার পর থেকে ওই পরিবারের উপর অত্যাচার চালাচ্ছিল তৃণমূল। কারণ, ওই পরিবার বিজেপিকে সমর্থন করে। এখন নির্যাতনের ঘটনাকে পুলিশ পারিবারিক বিবাদের ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু এটা পারিবারিক ঘটনা নয়।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমরা শুনেছি গল্পের গরু গাছে ওঠে। কিন্তু, এখানে গল্পের গরু নবান্নে ওঠে। নবান্ন থেকে গল্প তৈরি করে পুলিশকে দিয়ে বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা আমরা হতে দেব না।’’ কেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হল না, তাই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অগ্নিমিত্রা। তিনি বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে দু’-এক জন অভিযুক্ত জামিনও পেয়ে গিয়েছে। পুলিশ নির্যাতিতার কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও বয়ান নেয়নি। নিজেদের মতো করে ধারা দিয়ে দিচ্ছে।’’ তিনি আবারও সিবিআই তদন্তের দাবি করে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব।’’
অগ্নিমিত্রাদের অভিযোগ এবং বিক্ষোভ প্রসঙ্গে কোচবিহার জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসা বা রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। এটা সম্পূর্ণ ভাবে একটি পারিবারিক ঘটনা। ইতিমধ্যে পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারও করা হয়েছে। পুলিশ পুলিশের কাজ করেছে। তারা আরও তদন্ত করবে।’’
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কৃষ্ণগোপাল মিনা বলেন, ‘‘গত ২৫ জুন খোকসাডাঙা থানার অন্তর্গত এলাকায় একটি মহিলার পারিবারিক বিবাদের ঘটনা ঘটে। ইতিমধ্যে এই ঘটনায় পুলিশ অভিযোগ দায়ের করেছে। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০ জন অভিযুক্তের সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার জন্য পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।’’