জাতীয় সড়কের কাজ সম্পূর্ণ না করেই টোল ট্যাক্স আদায়ের প্রতিবাদে ফের পথে নামল বিভিন্ন পরিবহণের মালিক সংগঠনগুলি।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মালদহ জেলার দুই প্রান্তে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান পরিবহণ কর্মীরা। এ দিন সকালে বৈষ্ণবনগরের ১৮ মাইলে দু’ঘণ্টা এবং গাজলে চার ঘণ্টা ধরে টোল ট্যাক্স আদায়ের অফিসে চলে বিক্ষোভ। আর এর জেরে নাকাল হতে হয় নিত্যযাত্রীকে। যদিও পুলিশ প্রশাসনের কর্তা গিয়ে দু’পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসার আশ্বাস দিলে অবরোধ বিক্ষোভ তুলে দেন তাঁরা। অভিযোগ, মালদহের ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারনের কাজ এখনও শেষ হয়নি। বেহাল রাস্তার কারণে যানজট-সহ গাড়ির যন্ত্র ভেঙে বিকল হয়ে পড়ে থাকার ঘটনা নিত্যদিনের। এর প্রভাব পড়ছে যাত্রীবাহী গাড়ির মালিকদের উপরেও। প্রতিবাদে এ দিন রাস্তা অবরোধ করে দুই প্রান্তে চলে বিক্ষোভ।
মালদহ বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়শনের চাঁচল রুটের সম্পাদক অনন্ত চক্রবতী বলেন, ‘‘টোল প্লাজা দুটি টপকে দিনের মধ্যে অধিকাংশ বাসই একাধিকবার চলাচল করে। এমন অবস্থায় দৈনিক কমপক্ষে ৬০০ টাকা করে শুধুমাত্র টোল ট্যাক্সেই দিতে হবে আমাদের। যা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। কারণ সরকারি নিয়ম অনুসারে ভাড়া নেওয়ায় যখন তখন ভাড়া বাড়াতে পারি না আমরা।’’ প্রশাসন ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোনও পদক্ষেপ না করলে, জেলা জুড়েই আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন অনন্তবাবু।
এ দিকে, নিজেদের দাবিতে অনড় রয়েছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষও। জাতীয় সড়কের মালদহের প্রোজেক্ট ডিরেক্টর দীনেশ হানসারিয়া বলেন, ‘‘আমাদের রাস্তার কাজ ৮০ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। সেই ৮০ শতাংশেরই আমরা ট্যাক্স নেওয়া হচ্ছে। জাতীয় সড়কের আইন অনুযায়ী ট্যাক্স নেওয়া হচ্ছে।’’
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা থেকে রায়গঞ্জ পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রাস্তার কাজ চলছে। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে বৈষ্ণবনগরের ১৮ মাইল ও গাজলে দুটি টোল প্লাজা করা হয়েছে। গত, সোমবার থেকে দুটি টোল প্লাজায় টোল আদায় শুরু হয়েছে। মোটর সাইকেলের জন্য ৬৫ টাকা, মিনিবাসের জন্য ১০৫ টাকা, বাস ও ট্রাকের জন্য ২২৫ টাকা করা হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ জেলার বণিক মহল ও পরিবহণের মালিক সংগঠনগুলি।
সংগঠনগুলির, কালিয়াচকের সুজাপুর হাসপাতাল মোড় থেকে বালিয়াডাঙা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তার কাজ এখনও শেষ হয়নি। ইংরেজবাজারের সুস্থানি মোড় থেকে পুরাতন মালদহের নারায়ণপুর পর্যন্ত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বাইপাস তৈরির কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। এখনও মহানন্দা নদীর উপরে তৃতীয় সেতুর কাজ ৬০ শতাংশ হয়েছে। কাজ শেষ না করেই টোল আদায়ের বিরোধিতা করে জেলাতে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে পরিবহণ মালিক সংগঠনগুলি। দু’দিন আগেই জেলা প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়েছিল জেলার বণিক মহল ও পরিবহণের মালিক সংগঠনগুলি।
এ দিন সকাল সাতটা থেকে নটা পর্যন্ত বৈষ্ণবনগের ১৮ মাইলে এবং গাজলে নটা থেকে ১টা পর্যন্ত অবরোধ চলেছে। এর ফলে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয় মালদহে। বিপাকে পড়তে হয় নিত্যযাত্রীদের। পরে পুলিশ প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ উঠে গেলে যানজট মুক্ত হয় জাতীয় সড়ক। অতিরিক্ত জেলা শাসক দেবতোষ মন্ডল বলেন, ‘‘দু’পক্ষকেই ডাকা হয়েছে। সেখানে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’’