কাজ নেই, ভাত জোটাতে নাভিশ্বাস সাবেক ছিটে

অনেকেরই রেশন কার্ড বা জবকার্ড কোনওটাই নেই। কারও আবার জবকার্ড রয়েছে। কিন্তু তবুও মিলছে না কাজ। হাতে রেশন কার্ড। অথচ রাতের অন্ধকারের মোকাবিলা করতে হচ্ছে বাজার থেকে চড়া দামে কেনা কেরোসিনে।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৫৪
Share:

কবে মিলবে সরকারি সুবিধা জানা নেই। আশা নিয়েই দিন গুনছেন সাবেক ছিটের বাসিন্দারা। — হিমাংশুরঞ্জন দেব

অনেকেরই রেশন কার্ড বা জবকার্ড কোনওটাই নেই। কারও আবার জবকার্ড রয়েছে। কিন্তু তবুও মিলছে না কাজ। হাতে রেশন কার্ড। অথচ রাতের অন্ধকারের মোকাবিলা করতে হচ্ছে বাজার থেকে চড়া দামে কেনা কেরোসিনে।

Advertisement

দু‘বেলা দু‘মুঠো ভাত জোটাতে হিমশিম অবস্থা। ছিটমহল বিনিময়ের দেড় বছর পরে এটাই মশালডাঙার ছবি। যত দিন যাচ্ছে অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছেন বাসিন্দারা।

বাসিন্দাদের অনেকেই বলেন, ‘‘জবকার্ড ও রেশনকার্ড থাকলে তাতে আমাদের অন্ততপক্ষে একবেলার খাওয়ার সমস্যা মেটে। কিন্তু সেই সুবিধে আমরা ঠিকঠাক পাচ্ছি না।”

Advertisement

কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথনের যুক্তি, ছিটমহলের অবলুপ্তির পরে জবকার্ড বিলির জন্য ক্যাম্প করা হয়েছিল। কিন্তু সে সময় বাসিন্দাদের অনেকেই তাতে সামিল হননি। তিনি বলেন “আমরা অনুরোধ করা সত্ত্বেও অনেকেই তখন জবকার্ড নেননি। তবে পরেও তা পেতে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আবেদন করলে তা দেওয়া হয়। যদি কোথাও কোনও সমস্যা থাকে তা দেখা হবে।”

দক্ষিণ মশালডাঙার বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন সহ অনেকেই জানান, জবকার্ড নিয়ে তাঁদের এক সময় আপত্তি ছিল। তিনি বলেন, “আমরা সেই সময় প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। কিন্তু এখন জবকার্ড চাই। কাজও চাই। এখানে সবাই গরিব মানুষ। সরকারি প্রকল্পের সুবিধে পেলে তাঁদের উপকার হবে।”

যদিও মশালডাঙার আরেক বাসিন্দা হাতেম আলি জানান, তিনি ছ’মাস আগে জবকার্ড পেয়েছেন। কিন্তু ওই কার্ডে এখনও একদিনও কাজ পাননি। তিনি বলেন, “এক দিন কাজ হলে তো সেই টাকায় খাওয়ার জিনিসপত্র কিনতে পারব। কিন্তু এখনও কোনও কাজ পাইনি।”

দিনহাটার মহকুমাশাসক কৃষ্ণাভ ঘোষ জানিয়েছেন, জবকার্ডে বাসিন্দাদের কাজ পাওয়ার কথা। কেন পাচ্ছেন না তা খতিয়ে দেখা হবে।

তবে বাসিন্দাদের অনেকেই যে রেশনকার্ড পাননি তা স্বীকার করে নিয়েছেন কোচবিহারের জেলাশাসকও। তিনি জানান, খুব শীঘ্রই সাড়ে চার লক্ষ রেশন কার্ড বিলি করা হবে, সেখানে সাবেক ছিটমহলের বাকি বাসিন্দাদেরও নাম রয়েছে। মাস পাঁচেক আগে রেশন কার্ড তৈরির কাজ শুরু হয় সাবেক ছিটমহলগুলিতে।

মাস তিনেক আগে বাসিন্দাদের অনেকের হাতে ডিজিটাল রেশন কার্ড তুলে দেওয়া হয়। সেই কার্ডে রেশন দেওয়ার কাজও শুরু হয়েছে। অথচ মশালডাঙারই বাসিন্দা বাবলু আলি, জেসমিন খাতুন, নাসিমা খাতুন সহ অনেকেই এখনও রেশন কার্ড পাননি। তাঁরা বলেন, “খুব আশা ছিল বিনিময়ের পরে রেশন পাব। কিন্তু কিছুই পেলাম না। খুব কষ্ট করে কোনওমতে দিন কাটছে।”

খাদ্য সরবরাহ দফতরের কোচবিহার জেলা আধিকারিক কল্যাণ ঘোষ জানান, খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের ডিজিটাল রেশন কার্ড দেওয়া হয়েছে। ওই কার্ডে তাঁদের গম ও চাল মিলিয়ে ৩৫ কেজি সামগ্রী পাওয়ার কথা। তবে ওই কার্ডে কেরোসিন তেল দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। অথচ পুরনো কার্ডের গ্রাহকরা এখনও কেরোসিন পান। তাই তাঁদের ওই কার্ড দেওয়ার ব্যাপারে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলেও তিনি জানান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement