‘পেয়ারাদা’ এরশাদের মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন দিনহাটা

কথা বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন ভাই তোজাম্মেল হোসেন, তাঁর স্ত্রী বেগম জেবউননেশা হোসেন, মেয়ে বেগম নাজিনা আসমানি, পুত্রবধূ রুক্সানা বানুরা।

Advertisement

সুমন মণ্ডল 

দিনহাটা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৯ ০৬:৪৭
Share:

দিনহাটায় এরশাদের পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র

বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি দিনহাটার ছেলে হোসেন মহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দিনহাটায়। ভোরবেলায় জ্যেঠুর মৃত্যুর খবর পেয়ে এদিন সকালেই বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেন এরশাদের ছোট ভাইয়ের ছেলে আহসান হাবিব। এরশাদের শেষকৃত্যে থাকতে আজ সোমবার রওনা হচ্ছেন তার আর এক ভাইয়ের ছেলে জাকারিয়া হোসেন ও বোন বেগম নাজিমা আসমানি।

Advertisement

এ দিন সকালে এরশাদের মৃত্যুর খবর পেয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন দিনহাটায় তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এরশাদের ভাইপো জাকারিয়া হোসেন জানান, কিছু দিন ধরেই ফুসফুসে সংক্রমণ, রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বল্পতা নিয়ে ঢাকার সামরিক বাহিনীর একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি।

দিনহাটা শহরের ছ’নম্বর ওয়ার্ডের পুরনো বাস স্ট্যান্ড এলাকায় এরশাদের পৈতৃক বাড়ি। এই বাড়িতেই রয়েছেন তাঁর দুই খুড়তুতো ভাই তোজাম্মেল হোসেন, মোসাব্বের হোসেন ও তাদের পরিবার।

Advertisement

কথা বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন ভাই তোজাম্মেল হোসেন, তাঁর স্ত্রী বেগম জেবউননেশা হোসেন, মেয়ে বেগম নাজিনা আসমানি, পুত্রবধূ রুক্সানা বানুরা। এরশাদের ছবি হাতে নিয়ে বেগম জেবউননেশা বলেন, ‘‘আমাদের অহঙ্কার, আমাদের গর্ব ছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন আমাদের কাছে বট গাছের মতো। এদেশ থেকে যাবার পরে দীর্ঘ তিন দশক পর ২০০৯ সালে দিনহাটায় আসেন। পরে ২০১৫ এবং ২০১৭ সালেও এখানকার মানুষের টানে দিনহাটায় এসেছিলেন।’’

ব্যক্তিগত সফরে এলেও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও এরশাদকে তখন সংবর্ধিত করা হয়। তিনিও আপ্লুত হয়ে পড়েন। বিভিন্ন মহল থেকে বাংলাদেশের উপর দিয়ে দিনহাটার গীতালদহ হয়ে কোচবিহার-কলকাতা রেলপথ খোলার জন্য তাঁর কাছে দাবি জানানো হয়। সে দিন তিনি তাঁদের আশ্বস্ত করেন এই পথ খোলার জন্য তিনি চেষ্টা করবেন। বাংলাদেশের সংসদে এই পথ খোলা নিয়ে সরকার উদ্যোগীও হয় বলে এরশাদের ভাই তোজাম্মেল হোসেন জানান।

বেগম জেবউননেশা বলেন, ‘‘গত মার্চ মাসের প্রথম দিকে পরিবারের সকলেই বাংলাদেশ গিয়েছিলাম বড় আব্বার সাথে দেখা করতে। সে সময় তিনি অসুস্থ ছিলেন। গত ২০-২৫ দিন ধরে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ঢাকাতেই সামরিক বাহিনীর হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এদিন সকালে এরশাদের ভাই জেএম কাদেরের কাছ থেকেই প্রথম খবর পাই আমরা।’’

১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দিনহাটায় জন্মগ্রহণ করেন এরশাদ। দিনহাটা হাইস্কুল থেকে তিনি পড়াশোনা করেছেন। পরে বাবা মকবুল হোসেনের সাথে রংপুরে চলে যান। সেখানেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়ে ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন বলে তাঁর দিনহাটার পরিবার সূত্রে জানা গেছে।

শতবর্ষ প্রাচীন দিনহাটা হাই স্কুলে পড়াশোনা করার সময় তাঁর সহপাঠী ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী কমল গুহ, চিকিৎসক প্রয়াত অসিত চক্রবর্তী, সংগীতশিল্পী প্রয়াত সুনীল দাস ছাড়াও দিনহাটা পুঁটিমারী হাই স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সুধীর সাহা প্রমুখ।

তার সহপাঠীদের মধ্যে অনেকেই আজ না থাকলেও বর্তমান সুধীর সাহা। তিনি বলেন ‘পেয়ারা’ও তাকে ছেড়ে চলে গেল। দিনহাটার মানুষের কাছে এরশাদ পেয়ারাদা বলেই পরিচিত ছিলেন। এরশাদ সাহেবের মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করেন দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ। তিনি বলেন, ‘‘বাবার সহপাঠী ছিলেন এরশাদ। ইতিপূর্বে যে কয়েক বার তিনি দিনহাটা এসেছেন ততবারই তার সাথে দেখা করেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement