বৃষ্টি বাষ্পের আস্তরণে ঢেকেছে তিস্তা নদীর ওপরে রেলসেতু। শুক্রবার সকালে। ছবি দীপঙ্কর ঘটক।
তিস্তা নদীর উপরে কুয়াশার মতো জমে থাকা বাষ্পের ছবি শুক্রবার দিনভর সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়েছে। একই সঙ্গে ছড়িয়েছে ফুলেফেঁপে ওঠা তিস্তার জল কী ভাবে আশপাশের জনপদে ঢুকে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করেছে, সে ছবি। তিস্তায় এ দিনও লাল সতর্কতা জারি করে রেখেছে সেচ দফতর। তিস্তা ব্যারাজ থেকে ক্রমাগত অতিরিক্ত জল ছাড়া হচ্ছে। পাহাড়ে বৃষ্টি না থামলে আজ, শনিবার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা।
ময়নাগুড়ি, দোমহনি, জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া কিছু এলাকায় এ দিন সকাল থেকে তিস্তার জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়েছে। জলঢাকা নদীর জলস্তরও ধূপগুড়ি লাগোয়া জাতীয় সড়কের কাছে বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়েছে। হাতিনালার জল উপচে পড়ে বানারহাটে বন্যা পরিস্থিতি হয়েছে। ক্রান্তিতে বাসুসুবা-সহ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে রাত জাগছেন। প্রশ্ন উঠেছে, ফি বছর অতি বৃষ্টিতে কেন একই এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। বাসিন্দাদের প্রশ্ন, কেন একই এলাকায় বাঁধ ভেঙে যায়? হাতি নালার জল উপচে প্রতি বছর জনপদ ভাসিয়ে দিলেও কেন সম্পূর্ণ সংস্কার হয় না? প্রশাসনের দাবি, হাতিনালার সংস্কারের কাজ হয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টিতে সমস্যা হয়েছে। ভুটানে বৃষ্টির খবর ঠিকঠাক না মেলাও সমস্যার অন্যতম কারণ বলে দাবি।
বাঁধ সংস্কার নিয়ে এ বছর আগে থেকেই সেচ দফতরের তরফে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। বরাদ্দে টান থাকায় বন্যা মোকাবিলার কাজ ঠিকঠাক হয়নি বলে দাবি। প্রতি বছর বন্যা হলে একই যুক্তি প্রশাসনের তরফে শোনা যায় বলে বিরোধীদের অভিযোগ। জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায় বলেন, “আসলে বরাদ্দের অভাবে কোথাও আগাম বন্যা মোকাবিলার কাজ হয়নি।”
সেই সঙ্গে নদীখাত থেকে অপরিকল্পিত ভাবে বালি-পাথর তুলে নেওয়ায় বেশ কিছু ক্ষেত্রে নদীপথ বদলে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে বলে দাবি। সেচ দফতর সূত্রের বক্তব্য, গত কয়েক দিন টানা বৃষ্টিপাত হলেও গত বছরের তুলনায় জলপাইগুড়িতে বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে। আগামী কয়েক দিন ভারী বৃষ্টির পুর্বাভাস করেছে আবহাওয়া দফতর। তখন পরিস্থিতি কী হয়, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় প্রশাসন। বানারহাটে বৃষ্টির পরিমাণ এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। গত ২৪ ঘণ্টায় বানারহাটে বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ১৪৫ মিলিমিটার। শুক্রবার দিনভর তিস্তা ব্যারাজ থেকে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে তিন হাজার কিউমেক (জল পরিমাপের একক) জল ছাড়া হচ্ছে।
এ দিন গজলডোবার তিস্তা ব্যারাজ থেকে সব থেকে বেশি জল ছাড়া হয় সকাল ১১টায়। প্রায় ৩৬০৮.৪১ কিউমেক। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতি খানিকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।