River Bank Erosion

গঙ্গার গ্রাসে ভিটেজমি, গ্রামবাসীর আর্তি শুনে বিধায়ক বললেন, ‘আমি ব্যর্থ, আমিও তো বিপদে!’

রতুয়া বিধানসভার মহানন্দাটোলা এবং বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা গঙ্গার ভাঙনে বিপন্ন। কয়েক মাইল দূর দিয়ে যে গঙ্গা বয়ে যেত, তা আজ বাড়ির দোরগোড়ায়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

রতুয়া শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২৩ ১২:৩৬
Share:

জমি-বাড়ি বাঁচাতে বিধায়ককে হাতজোড় করে আবেদন এক মহিলার। —নিজস্ব চিত্র।

গঙ্গার গ্রাসে গিয়েছে চাষের জমি। ক্রমশ এগিয়ে আসা গঙ্গার ভাঙনে এ বার তলিয়ে যেতে বসেছে বসতবাড়িও। পরিস্থিতি দেখে স্থানীয় বিধায়কের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু বিধায়ক জানিয়ে দিলেন, তিনি অসহায়। তাঁর পৈতৃক ভিটেও গঙ্গায় তলিয়ে যেতে বসেছে। মালদহের রতুয়ায় এ নিয়েও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর। উঠেছে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ।

Advertisement

গত কয়েক দিন ধরে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে রতুয়ায় গঙ্গার ভাঙন। বিঘার পর বিঘা জমি গঙ্গাগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। রতুয়া বিধানসভার মহানন্দাটোলা এবং বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা গঙ্গার ভাঙনে বিপন্ন। কয়েক মাইল দূর দিয়ে যে গঙ্গা বয়ে যেত, তা আজ বাড়ির দোরগোড়ায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভাঙন প্রতিরোধের কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। গৃহহীন হওয়ার আশঙ্কায় তাঁরা। ‘‘মাথার ছাদ চলে গেলে থাকব কোথায়?’’ মালদহের রতুয়া বিধানসভার কেন্দ্রের বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়ের কাছে এমনই আর্জি নিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন বাসিন্দারা। বিধায়কের পায়ে হাত দিয়ে আর্জি জানান গ্রামের মহিলারা।

অঞ্জু মণ্ডল নামে এক বধূর কথায়, ‘‘জমিতে চাষ করে সংসার চলত। গঙ্গা সব গিলে খেয়েছে। স্বামীকে হারিয়েছি দু’বছর আগে। দিল্লিতে শ্রমিকের কাজ করে মাথার উপরে ছাদ করেছি। আজ গঙ্গা সেই ছাদটাও কেড়ে নিয়েছে। ছোট ছোট বাচ্চা রয়েছে। আর জমি নেই। কী করব, কিছু বুঝতে পারছি না।’’ দুই চোখের জল মুছতে মুছতে মধুসূদন মণ্ডল বলেন, ‘‘এই প্রথম গঙ্গার ভাঙনে গৃহহীন হলাম। জমি হারিয়ে চাষবাস ছেড়ে শ্রমিকের কাজ করতে দু’বছর আগেই ভিন্‌রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলাম। আশা ছিল, ভাঙন প্রতিরোধের কাজ করবে সরকার। কিন্তু দুই বছরে কিছুই হয়নি। স্ত্রীর ফোন পেয়ে ভিন্‌রাজ্য থেকে কাজ ছেড়ে ছুটে এসেছি। কোথায় যাব, বুঝতে পারছি না।’’

Advertisement

সমস্যা শুনে বিধায়ক বলছেন, ‘‘আমার পৈতৃক ভিটেও ভাঙনের মুখে। বাড়ি থেকে কয়েকশো মাইল দূরে ছিল গঙ্গা। আজ দূরত্ব কমে হয়েছে মাত্র ৩০০ মিটার।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘৮২ সাল থেকে বিধায়ক। কিন্তু আমি ব্যর্থ। কেন্দ্রীয় সরকার ভাঙন প্রতিরোধের জন্য কোনও অর্থ বরাদ্দ করছে না। তাই রাজ্য সরকারের পরিকাঠামো থাকার পরেও ভাঙন প্রতিরোধের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।’’ এর পর তিনি বিজেপির সাংসদের কোর্টে বল ঠেলে বলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনে ভাঙন সমস্যার স্থায়ী সমাধান করবে বিজেপি সরকার— এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটে জিতেছিলেন খগেনবাবু (মুর্মু)। কিন্তু কোনও কাজ করেননি। তাই এলাকার মানুষ ক্ষিপ্ত। এলাকায় এলে খগেনবাবুকে গঙ্গায় নিক্ষেপ করবেন বাসিন্দারা। কেন্দ্রীয় সরকারের এমন বঞ্চনার প্রতিবাদ জানিয়ে ফরাক্কা ব্যারেজ এবং জাতীয় সড়ক অবরোধ করব।’’

অন্য দিকে, উত্তর মালদহের সাংসদ খগেন মুর্মু বলছেন তিনি বিষয়টি নিয়ে অবগত। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘রাজ্য সরকার ভাঙন প্রতিরোধের জন্য কোনও প্রস্তাব পাঠায়নি। নিজেদের গাফিলতি এবং উদাসীনতা ঢাকতে এমন প্রলাপ করছেন বিধায়ক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement