মহম্মদ সাহিদ আখতার।
‘‘খুব জরুরি। সাত মাসের বাচ্চা। এক বার দেখো ভাই’’— ‘ভাই’ এগোলে যে কাজ হবেই তা জানেন সকলে। অন্য সময়ে এমন মেসেজ পেয়ে উত্তর পেতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে। কিন্তু কয়েক বার মেসেজ করেও ভাইয়ের সাড়া না পেয়ে উদ্বিগ্ন প্রশ্ন, ‘‘সব ঠিক আছে তো?’’ সেই ভাইয়ের হাতে তখন মালদহ মেডিক্যাল কলেজের লালারস পরীক্ষার রিপোর্ট। তালিকায় চোখ বুলিয়ে দেখলেন, তাঁরও পজিটিভ। কিছুক্ষণের জন্য হলেও মন চঞ্চল হয়ে উঠেছিল। কিন্তু দায়িত্ব বড় বালাই। উত্তর দিলেন, ‘‘একটু সময় দে।’’
আধঘন্টাও পেরোয়নি। শিশুর বাবাকে নিয়ে কল্যাণী রওনা দিল গাড়ি। সঙ্গে ভাইয়ের দুই সঙ্গী। ভাইয়ের নির্দেশমতো সব কাজ সারলেন তাঁরা।
রতুয়ার দেবীপুরের সাতমাসের শিশুটির ‘এবি নেগেটিভ’ গ্রুপের রক্তের প্রয়োজন ছিল। জেলায় কোথাও ওই বিরল গ্রুপের রক্ত মেলেনি। সোশ্যাল মাধ্যমে সে কথা জেনে কল্যাণীর এক জন রক্ত দিতে চান। সেই রক্তে সুস্থ হয় শিশুটি।
শুধু ওই শিশুই নয়, গত ছ’মাসে জেলার অন্তত দুশো জনের রক্তের ব্যবস্থা এ ভাবেই করেছেন রতুয়ার ভাদোর মহম্মদ সাহিদ আখতার। সবাই তাঁকেই ডাকেন ‘ভাই’ বলে। বাবা হুমায়ুন কবীর জেলা পরিষদ সদস্য। সাহিদ টিএমসিপি করেন। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রক্ত জোগাড় করাই তাঁর মূল কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাহিদ জানান, এক সময় অনেকেই রক্তের প্রয়োজনের কথা বলতেন। কিন্তু কী ভাবে তাঁদের সাহায্য করবেন তা বুঝে উঠতে পারতেন না। এর পর সঙ্গীদের নিয়ে উদ্যোগী হন। ফেব্রুয়ারি মাসে ‘ব্লাড ব্যাঙ্ক সোসাইটি’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলেন। তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী হন মৃণাল মণ্ডল, শেখ আদি, কৃষ্ণ প্রামাণিক, সৌরভ ঘোষ, বিপ্লব সাহার মতো ৭৫ জন যুবক। বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, ফেসবুকে প্রচার চলতে থাকে। ব্লাড ব্যাঙ্ক, চিকিৎসক থেকে শুরু করে অনেকের কাছে তাঁদের ফোন নম্বর দেওয়া রয়েছে। কেউ যোগাযোগ করলে প্রথমে নিজেদের গ্রুপে কারও সেই রক্ত রয়েছে কিনা দেখা হয়। না থাকলে খোঁজাখুঁজি শুরু হয় অন্য গ্রুপ বা পরিচিতদের মধ্যে। ফেব্রুয়ারির পর থেকে এ ভাবেই প্রতিদিন মুমূর্ষ কারও না কারও জন্য রক্তের জোগান করে চলেছেন তাঁরা। করোনার সঙ্গে লড়াইয়েও এখন জয়ী সাহিদ। কিছু দিন আইসোলেশনে থাকলেও কাজ বন্ধ ছিল না। সাহিদ বলেন, ‘‘আমাদের এই কাজ রাজনীতি থেকে অনেক দূরে। সব দলেরই সদস্য রয়েছেন। কারও সঙ্কট মিটলে তাঁর হাসি দেখে যে আনন্দ পাই, এমন আনন্দ রাজনীতিতেও পাই না।’’