খুচরো নেই। কাউন্টারে ভিড়। — মনোজ মুখোপাধ্যায়
সরকারি ঘোষণা সত্ত্বেও স্টেশনে টিকিট কাটার সময়ে অনেক জায়গাতেই নেওয়া হল না ৫০০ ও ১০০ টাকার নোট। বুধবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় অভিযোগ উঠেছে।
ভোগান্তি হয়েছে বিদ্যুৎ বিল দিতে গিয়েও। গ্রাহকদের অভিযোগ, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট নিতে চাওয়া হয়নি। তা নিয়ে কোথাও বচসা, কোথাও ক্ষোভে ফেটে পড়েছে জনতা। বিক্ষোভও হয়েছে কয়েকটি এলাকায়।
রাজকিশোর ঠাকুরের কথা ধরাই যাক। জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশন থেকে তিস্তা-তোর্সা এক্সপ্রেসে চেপে কিষানগঞ্জে যাবেন বলে টিকিট কাউন্টারে যান তিনি। তার অভিযোগ, রিটার্ন টিকিট কাটবো বলার পরও কাউন্টারে তাঁর দেওয়া ৫০০ টাকার নোট নেওয়া হয়নি৷ কিন্তু নিজের কাছেও খুচরো না থাকায় অগত্যা বিনা টিকিটেই তিনি ট্রেনে চাপতে বাধ্য হন৷ একই অভিজ্ঞতা পঙ্কজ সাহা বা রমেন রায়দেরও৷ তাঁদের অভিযোগ, কাউন্টার থেকে বলে দেওয়া হয়েছে, সাড়ে তিনশো টাকার টিকিট কাটলে তবেই পাঁচশোর নোট খুচরো হবে৷ কাউন্টারের কর্মীদের কথায়, এ দিন সকাল থেকেই এত বেশি করে পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট কাউন্টারে আসছে, সে তুলনায় খুচরো টাকা তাঁদেরও নেই৷ বাধ্য হয়েই তাই এমনটা করছেন তাঁরা৷ অন্যদিকে পাঁচশো টাকার নোট নিয়ে এ দিন সমস্যায় পড়তে হয় জলপাইগুড়ির উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার কর্মীদেরও৷ তাঁদের অভিযোগ, সারা দিনে এমন অনেক যাত্রী মিলেছে যারা কুড়ি টাকা ভাড়ার জন্য পাঁচশোর নোট কনডাক্টরদের দিচ্ছেন ৷
মালদহ রেল স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে জটিলতা চলেছে দিনভর। সকাল থেকেই স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের লেনদেন হলেও বেলা বাড়তেই কার্যত তা বন্ধ হয়ে যায় বলে অভিযোগ। এর জেরে রেলযাত্রীরা টিকিট কাউন্টারে হইচই জুড়ে দেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে টিকিট কাউন্টারে নিয়োগ করা হয় আরপিএফ। খুচরো টাকা নেওয়ার জন্য টিকিট কাটতেই অধিকাংশ যাত্রীই ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট দিচ্ছেন কাউন্টারে। এর ফলে কাউন্টারে খুচরো নোটের অভাব দেখা দেয়। যার জন্য এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন রেল কর্তৃপক্ষ।
উপরন্তু, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি ও মালদহে বিদ্যুৎ দফতরেই বন্ধ ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের লেনদেন। ফলে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট নিয়ে বিদ্যুৎ বিল দিতে গিয়ে ফিরতে হয়েছে অনেককেই। তবে বিদ্যুৎ দফতরে বিল দেওয়ার হিড়িক অন্য দিনের তুলনায় কম ছিল। রথবাড়ি, রাজমহল রোড, ফুলবাড়ি সেক্টরে বিদ্যুৎ বিল জমা দেওয়ার লাইন না পড়ায় ছুটির মেজাজ কর্মীদের। এক কর্মী বলেন, দৈনিক লম্বা লাইন পড়ে বিদ্যুৎ বিল জমা দেওয়ার জন্য। গ্রাহকদের কাছে পর্যাপ্ত খুচরো টাকা না থাকায় অনেকে আসেননি। তবে যাদের বিল মেটানোর দিন ১২ নভেম্বর পর্যন্ত রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে তা বাড়িয়ে ১৫ নভেম্বর করা হয়েছে ৷ সমস্যা হয়েছে পেট্রোল পাম্পেও। পুরানো পাঁচশ ও হাজার টাকার নোট চালাতে পেট্রোল পাম্পের দোকানে এ দিন ভিড় জমলো জলপাইগুড়িতে৷ অনেকেই সকাল থেকে জলপাইগুড়ির বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পে ভিড় জমাতে শুরু করেন৷ কিন্তু অভিযোগ, প্রথম দিকে পাঁচশো বা হাজারের নোট খুচরো দিয়েই পেট্রোল মিলছিল পাম্পগুলিতে৷ তবে খানিক্ষণের মধ্যেই পাঁচশো বা হাজার টাকার পেট্রোল নিলে তবেই সেই নোটগুলি নেওয়া হবে বলে কয়েকটি পাম্প জানিয়ে দেয়। কর্মীরা জানান, খুচরোর সমস্যার জন্যই এমনটা করতে বাধ্য হন তাঁরা৷