রায়গঞ্জ থেকে ভবানীপুর কত দূর!
রায়গঞ্জ বলছে, এইমস যত দূর।
রায়গঞ্জের ঘরের ছেলে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির উদ্যোগেই এইমসের ধাঁচের হাসপাতাল হওয়ার কথা ছিল এখানে। প্রিয়রঞ্জন অসুস্থ হওয়ার পরে তাঁর স্ত্রী দীপা একই চেষ্টা করে গিয়েছিলেন। কিন্তু রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে রায়গঞ্জ থেকে ওই হাসপাতাল সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তারপর থেকেই রায়গঞ্জে তৃণমূলের উপরে ক্ষোভ বাড়তে শুরু করে। সেই ক্ষোভ এতটাই যে, শুক্রবার ভবানীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিদ্বন্দ্বী দীপার হয়ে মহম্মদ সেলিমকে প্রচারে নামতে দেখেও অবাক নন অনেকেই। মাত্র বছর দেড়েক আগে লোকসভা ভোটে রায়গঞ্জ কেন্দ্রে সেলিমই দীপাকে হারান। কংগ্রেসের দুর্গ বলে কথিত রায়গঞ্জে এ দিন টিভিতে সেলিমকে প্রচারে নামতে দেখে অনেকেই জানিয়েছেন, মমতাকে হারাতে পথে নেমে সেলিম তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের মানুষের মানই রেখেছেন।
লোকসভা ভোটে দীপার হারের ব্যবধান ছিল মাত্র দেড় হাজারের কিছু বেশি ভোট। ভোটের পরে দীপার ঘনিষ্ঠ অনেকে দাবি করেছিলেন, ‘বৌদি’কে হারাতে তৃণমূলের একাংশ সিপিএম প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। লোকসভা ভোটের এক বছর দশ মাস পরে এবার তৃণমূলকে হারাতেই ‘বৌদি’র সমর্থনে মিছিলে হেঁটেছেন সিপিএমের সেই রায়গঞ্জের প্রার্থী।
তৃণমূল অবশ্য এই সুযোগে খোঁচা দিতে ছাড়ছে না। গত লোকসভা ভোটে দীপা এবং সেলিম পরস্পরের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছিলেন, সেই অভিযোগগুলি ফের বাতাসে ভাসাতে শুরু করেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। তাঁরা জানাছেন, এইমসের ধাঁচের হাসপাতাল রায়গঞ্জে না হওয়ায় তৃণমূলের সঙ্গে বামেদেরও তখন দোষ দিয়েছিলেন দীপা। পাল্টা আক্রমণ করেছিলেন সেলিমও। সে ক্ষেত্রে এ বার তাঁরা পরস্পরকে কী বলবেন? স্থানীয় এক কংগ্রেস নেতার সরস মন্তব্য, ‘‘ভবানীপুরের ভোটে এইমস অপ্রাসঙ্গিক। তাই এই নিয়ে কথা উঠবে বলে মনে হয় না। তাই সে কথা ভুলে দু’জনই মমতাকে আক্রমণ করলে রায়গজ্ঞবাসী খুশিই হবেন।’’
সেলিম অবশ্য গা বাঁচিয়েই সমর্থন করেছেন। তিনি একবারও দীপা বা কংগ্রেসের নাম উল্লেখ করেননি। তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষের জোটের কথা বলেছেন। জেলা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক অপূর্ব পাল বলেন, ‘‘অতীতে কী হয়েছে না হয়েছে, সেগুলো নিয়ে ভাবলে চলবে না। দীপাদেবীর সমর্থনে দল প্রচার করবে তা আগেই দলের তরফে সেলিম জানিয়ে দিয়েছেন।’’
জেলা কংগ্রেস নেতারাও প্রকাশ্যে দাবি করছেন দীপার সমর্থনে সেলিমের মিছিলে কোনও অস্বস্তি নেই। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দের দাবি, ‘‘বামফ্রন্ট দীপাদেবীকে সমর্থন করেছেন। কারণ একমাত্র দীপাদেবীর পক্ষেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানো সম্ভব। তাই সিপিএম বা বামফ্রন্টের সঙ্গে অতীতে আমাদের কী সম্পর্ক ছিল, তা নিয়ে এখন ভাবার সময় নেই। সেলিম উচিত কাজই করেছেন।’’
বিজেপি এবং তৃণমূল অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না। বিজেপির জেলা সভাপতি নির্মল দামের কথায়, ‘‘ভবানীপুরে আজ যা ঘটল, তাতে মনে হচ্ছে রং বদলানোর পেটেন্ট এবার আমাদের জেলাতেই আসবে।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য বলেন, ‘‘যে দীপাদেবী ও সেলিম একে অপরের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন, তাঁরাই এখন ক্ষমতা দখলের লোভে মিছিল করছেন। মানুষ হাসছে।’’