কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ। —ফাইল চিত্র।
‘হুমকি প্রথা’ (থ্রেট কালচার) কি ফের ফিরতে চলেছে কোচবিহার এম জে এন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে?
দিন কয়েক ধরে এমনই প্রশ্ন ঘুরতে শুরু করেছে। অভিযোগ, ‘হুমকি প্রথায়’ জড়িত বলে যাঁদের নাম শোনা গিয়েছিল, তাঁরা ফের ‘সক্রিয়’ হয়ে উঠছেন। জুনিয়র চিকিৎসকদের নতুন সংগঠন তৈরি হওয়ার পরে অভিযুক্তদের কয়েক জন সেখানে যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন। যদিও এখনও কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নতুন সংগঠনের হয়ে কেউ প্রকাশ্যে আসেননি।
এত দিন ‘জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’-এর ডাকেই কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকেরা আন্দোলনে শামিল হচ্ছিলেন। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাঁরা এত দিন চুপচাপ ছিলেন। মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর, এ বার ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন’ তৈরি হওয়ার পরে অভিযুক্তদের অনেকেই ওই সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ভিডিয়ো-কলে একটি বৈঠকও করা হয়েছে। কিছু হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ‘ডক্টর্স ফ্রন্ট’-এর আন্দোলন নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে। তবে এ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে নারাজ।
এক জুনিয়র চিকিৎসক বলেন, ‘‘আমরা হুমকি-প্রথা নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছি। চিকিৎসকদের একাধিক সংগঠন নিয়ে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই। কিন্তু নতুন করে যাতে আর হুমকি প্রথা ফিরে না আসে, সে দিকে সবার লক্ষ্য রাখা উচিত।’’
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘হুমকি-প্রথা’ নিয়ে ইতিমধ্যেই ৩০ জনের বেশি ছাত্রছাত্রী তদন্ত কমিটির কাছে ‘অন-লাইনে’ অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। অভিযোগ খতিয়ে দেখে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে। কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ নির্মলকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘হুমকি প্রথার অভিযোগ নিয়ে তদন্ত কমিটি অল্প সময়েই রিপোর্ট জমা দেবে। সে হিসেবেই তা নিয়ে কলেজ কাউন্সিলে আলোচনা করা হবে। রাজ্য সরকারকে জানানো হবে। তার পরেই পদক্ষেপ করা হবে। নতুন করে হুমকি-প্রথা কোনও ভাবেই যাতে ফিরে না আসে, সে দিকে লক্ষ্য রেখে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
আর জি কর-কাণ্ডের পরে হুমকি প্রথার অভিযোগ উঠতে শুরু করে কোচবিহার এম জে এন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালেও। লিখিত ভাবে অধ্যক্ষের কাছে একাধিক অভিযোগ জানানো হয়।
অভিযোগ ওঠে ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার খাতা কাটাকুটি করে নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া, কথা না শুনলে ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার ফল ভাল না হওয়া, হস্টেলে ভাল ঘর না পাওয়া থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় বিষয়ে অনার্স পাওয়া নিয়েও সমস্যা তৈরি করা হত। বহিরাগত দুই চিকিৎসকের মদতে কলেজের কয়েক জন ছাত্র ওই ‘হুমকি প্রথা’ চালু করেন বলে অভিযোগ। গত মাসে সাইকোলজি বিভাগের প্রধান মহম্মদ সোহেব খানকে চেয়ারম্যান করে পাঁচ জনের তদন্ত কমিটি তৈরি করা হয়। ওই কমিটিকে এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া, একটি ‘ইন্টারনাল কমিটি’ গঠন করা হয়। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে ওই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার কথা জানানো হয়েছে।