ভস্মীভূত হোটেল। শিলিগুড়িতে। ছবি: স্বরূপ সরকার
আগুন লেগে হোটেলের মধ্যে থাকা কর্মীর মৃত্যুতে পুরসভা এবং দমকলের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গত সাত বছরে শিলিগুড়িতে একই ধরনের অন্তত তিনটি ঘটনায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে। তার পরেও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
২০১৬ সালের ঘটনায় গুমটি হোটেলটির ‘ট্রেড লাইসেন্স’ ছিল না। অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের হোটেলে দমকলের ‘ফায়ার লাইসেন্স’ বা পুরসভার লাইসেন্স নেওয়া হলেও অগ্নিকাণ্ড রুখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকে না বলে অভিযোগ। অথচ, গ্যাসেই রান্না করা হয় এবং একাধিক গ্যাস সিলিন্ডার মজুতও করা থাকে।
এ বারের দুর্ঘটনার পরে, পুরনো প্রশ্নগুলোই নতুন করে উঠে আসছে। অভিযোগ, হোটেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ছিল। সেই সঙ্গে পুরসভার নজরদারি বা এই ধরনের ঘটনা রুখতে হোটেলগুলোকে সতর্ক করা, অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা বিষয়ে সচেতনতার প্রচার সে অর্থে কিছুই নেই বলেও অভিযোগ। পুরসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির অমিত জৈনরা এ নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন। এ ধরনের ঘটনা এড়াতে কী করণীয় পুরসভার, তা ভাবা দরকার বলে সরব হয়েছেন তাঁরা।
শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব এ দিন বলেন, ‘‘পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি। দুঃখজনক ঘটনা। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তের পরে, আমরা বাকি বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’’ রাতে গুমটি হোটেল তথা খাবারের হোটেলগুলোতে কর্মীদের থাকা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি নিয়ে মেয়র বলেন, ‘‘ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বলব এ বিষয়ে।’’
দমকলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, নানা ক্ষেত্রেই এ ধরনের হোটেলে যথাযত অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা থাকে না। অগ্নি নির্বাপক পরিকাঠামো থাকলেও তার ব্যবহারে কর্মীরা প্রশিক্ষিত নন। দমকলের ফায়ার লাইসেন্স নেওয়ার সময় সে সব জিনিস দেখানো হলেও পরে সেগুলো ‘রিফিলিং’ করা বা ঠিক মতো রাখা হয় না। শিলিগুড়ি দমকলের স্টেশন অফিসার অজিত ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি। ফায়ার লাইসেন্স নেওয়ার নথিপত্র ওই হোটেলের মালিকের কাছে চাওয়া হয়েছে।’’
হোটেল মালিক সঞ্জয় ঘোষের দাবি, তাঁর কাছে ‘ফায়ার লাইসেন্স’ রয়েছে এবং দু’টি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রও হোটেলে ছিল। তাঁর আরও দাবি, বাইরে থেকে তালা বন্ধ করা হয়নি এবং চাবি ওই কর্মীর কাছেই থাকত। কিন্তু তা হলে তিনি বেরোতে পারলেন না কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ দিন হোটেলের মালিক বলেন, ‘‘আগে দোকানের ভাড়া দিতাম। জমির মালিক প্রোমোটিং করার জন্য চাইলেও আমরা দিইনি। তা নিয়ে মামলা চলছে। ১৯৯০ সাল থেকে ভাড়া দেওয়া হয় না। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কেউ এই আগুন লাগিয়েছে কি না, পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।’’ অন্য দিকে, জমির মালিক পক্ষের তরফে জয়বিষ্ণু চৌধুরী বলেন, ‘‘কে, কী বলছে, তা পুলিশি-তদন্ত হলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’