সুদীপ্তকুমার দে নামে অন্য এক শিক্ষকের জায়গায় ‘প্রক্সি’ দিচ্ছেন তাঁর বোন রূপা দে (বাঁ দিকে)। প্যারা টিচার মণি পাল বোসের জায়গায় স্কুলে আসছেন তাঁর ছেলে প্রীতম বোস (ডান দিকে)। — নিজস্ব চিত্র।
মায়ের বদলে ছেলে। দাদার বদলে বোন। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস স্কুলে আসছেন। ছাত্রছাত্রীদের পড়াচ্ছেন। খাতা দেখছেন। বেতন নিচ্ছেন। বাড়ি যাচ্ছেন। এমনই অনিয়মমের অভিযোগ উঠল ডুয়ার্সের গয়েরকাটা এলাকার একটি স্কুলে। সেখানকার প্রধান শিক্ষিকার মুখে কুলুপ। প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, তিনি কিছুই জানেন না। বিজেপি বলছে, রাজ্যের গোটা শিক্ষা দফতরই জেলে। তাই এর থেকে বেশি আশা করা যায় না। তৃণমূল দায় ঠেলেছে বিজেপির দিকেই।
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে একের পর এক মামলা উঠেছে হাই কোর্টে। চাকরি হারাচ্ছেন একের পর এক শিক্ষক থেকে গ্রুপ ডি কর্মী। এর মধ্যেই প্রকাশ্যে এল গুরুতর এক অভিযোগ। ডুয়ার্সের বানারহাট ব্লকের পূর্ব গয়েরকাটা এলাকার ‘অ্যাডিশনাল প্রাথমিক বিদ্যালয়’-এর ঘটনা। গত কয়েক মাস ধরে স্কুলে আসছেন না দু’জন শিক্ষক। প্যারা টিচার মণি পাল বোসের জায়গায় স্কুলে আসছেন তাঁর ছেলে প্রীতম বোস। সুদীপ্তকুমার দে নামে অন্য এক শিক্ষকের জায়গায় ‘প্রক্সি’ দিচ্ছেন তাঁর বোন রূপা দে।
সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কি এ ভাবে ‘প্রক্সি’ দেওয়া যায়? এক জন শিক্ষকের পরিবর্তে তাঁর পরিবারের কেউ কি স্কুলে গিয়ে পড়াতে পারেন? শিক্ষা দফতরের নিয়ম অনুযায়ী, এ রকম করা যায় না। তা হলে কী ভাবে মাসের পর মাস ডুয়ার্সের ওই স্কুলে এ রকম চলছে? তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। মায়ের বদলে ক্লাস নেওয়া প্রীতম বলেন, ‘‘আমি সাত মাস ধরে এখানে শিক্ষকতা করছি। এই স্কুলে আমার মা চাকরি করেন। উনি অসুস্থ বলে ওঁর বদলে আমি কাজ করছি। এসআই (স্কুল পরিদর্শক) লিখিত আকারে আমাকে অনুমতি দিয়েছে বলেই কাজ করছি।’’ আর এক ‘ভুয়ো’ শিক্ষক রূপার কথায়, ‘‘আমার দাদা সুদীপ্তকুমার দে। এই স্কুলের শিক্ষক। দাদা চার বছর ধরে অসুস্থ। তাই দাদা স্কুলে আসতে পারেন না। আমি তাঁর জায়গায় ক্লাস করে দিচ্ছি।’’
ভুয়ো শিক্ষকের অভিযোগ পেয়ে স্কুলে আসা সংবাদ মাধ্যমকের প্রতিনিধিদের দেখে প্রায় তেড়ে আসেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সঞ্চারী গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি গোটা বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘‘আমি এসআইয়ের অনুমতি ছাড়া স্কুলের কোনও তথ্য বাইরের কাউকে দিতে পারি না।’’
বিজেপির ধূপগুড়ি উত্তর-১ মণ্ডল সভাপতি কৌশিক নন্দী বলেন, ‘‘রাজ্যের গোটা শিক্ষা দফতরটাই জেলে। রাজ্যে যে সরকার রয়েছে, এদের থেকে এর বেশি আশা করা যায় না। যেখানে কোর্ট একের পর এক ভুয়ো শিক্ষকদের চাকরি বাতিল করছে, সেখানে এখনও কিছু অসাধু মানুষ এ সব চালিয়ে যাচ্ছেন। এঁদের জন্যই বাচ্চাদের সরকারি স্কুল ছেড়ে বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করছেন সাধারণ মানুষ।’’
তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি মানসরঞ্জন ঠাকুর অবশ্য বিজেপির দিকে পাল্টা দায় ঠেলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। ওখানে বিজেপির পঞ্চায়েত। দায়িত্বে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা বলতে পারবেন।’’
জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান লৈখ্যমোহন রায় বলেন, ‘‘আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না। সম্পূর্ণ অন্ধকারে।’’ বিষয়টি নিয়ে তিনি খোঁজ নেবেন বলেও জানিয়েছেন।