রায়গঞ্জের পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙছে এবিভিপি। নিজস্ব চিত্র
নাবালিকাকে গণধর্ষণ করে খুনের অভিযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলনের জেরে সোমবার দিনভর উত্তপ্ত থাকল উত্তর দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকা। অন্য দিকে, এ দিন ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের সঙ্গে জেলা পুলিশ, প্রশাসন ও রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের বিরোধ কার্যত চরমে উঠল। এ দিন সকালে রায়গঞ্জের কর্ণজোড়া সার্কিট হাউস ছেড়ে বাগডোগরা হয়ে বিমানে দিল্লি রওনা হয়ে যান জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রিয়ঙ্ক কানুনগো। সার্কিট হাউস থেকে বেরোনোর সময়ে তিনি জেলা পুলিশ, প্রশাসন ও রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের দিল্লিতে তলব করার কথা বলেন। প্রিয়ঙ্ককে বিঁধে পাল্টা সুর চড়াতে দেরি করেননি রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন ও রায়গঞ্জ পুলিশ-জেলার কর্তারা।
গত শুক্রবার সকালে উত্তর দিনাজপুরের একটি এলাকার পুকুরের ধারে ওই নাবালিকার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন এলাকাবাসী। ঘটনাস্থলে একটি কীটনাশকের কৌটো মেলে বলে পুলিশের দাবি। মেয়েটিকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়।
শুক্রবার রাতেই ওই নাবালিকাকে গণধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে দুই অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তারা সম্পর্কে বাবা ও ছেলে। পুলিশ সূত্রের খবর, নাবালিকার মায়ের দায়ের করা অভিযোগে ধৃত বাবা ও ছেলের নাম ছাড়া, আরও দুই যুবকের নাম রয়েছে। তারা সম্পর্কে ছেলেটির মামা। সেই দুই অভিযুক্তের পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে, নাবালিকার মৃত্যুর সঙ্গে ওই দু’জনের কোনও যোগ নেই। এখনও সেই দুই অভিযুক্ত অধরা। কেন এখনও তারা অধরা এবং ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান ও তাঁর স্বামীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিবারটি। দাবি তুলেছে সিবিআই-তদন্তের। নিরাপত্তা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তারা।
সব অভিযুক্তের গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির দাবিতে এ দিন রায়গঞ্জে পুলিশ সুপারের অফিস ঘেরাও করার চেষ্টা করে বিজেপি প্রভাবিত ছাত্র সংগঠন এবিভিপি। আন্দোলনকারীরা পুলিশের একটি ব্যারিকেড ভেঙে দেয়। একই দাবিতে জেলার দু’জায়গায় প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান বিজেপির এসসি ও মহিলা মোর্চার সদস্যেরা। পাশাপাশি, একই দাবিতে ডিওয়াইএফের তরফে রায়গঞ্জ থানার সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়। আন্দোলনকারীরা থানা চত্বরের প্রধান গেট ধাক্কাধাক্কি করে ভাঙার চেষ্টা করলে, সাময়িক উত্তেজনা তৈরি হয়। বিজেপি প্রভাবিত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সংগঠনের তরফে জেলার একটি জায়গায় বিক্ষোভ ও পথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। এই পরিস্থিতিতে, এ দিন তদন্তকারী পুলিশ-কর্তারা মৃত ওই নাবালিকার বাড়িতে গিয়ে তাঁদের মামলার নথি ও ‘সিজ়ার লিস্ট’-এ সই করার অনুরোধ করেন। কিন্তু তাঁরা সই করতে রাজি হননি। মৃতার কাকা বলেন, “আমার ভাইঝি আত্মহত্যা করেছে বলে পুলিশ প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। পুলিশের উপরে আমাদের ভরসা নেই। তাই পুলিশকে আমরা সহযোগিতা করিনি। আমরা সিবিআই তদন্ত চাই।”
অন্য দিকে, শনিবার বৈঠকের জায়গা নির্ধারণ নিয়ে দাবি ও পাল্টা দাবিকে কেন্দ্র করে জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের সঙ্গে রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশের বৈঠক ভেস্তে যায়। এ দিন সার্কিট হাউজ় ছাড়ার সময়ে প্রিয়ঙ্ক বলেন, “আমরা ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরে, মামলার তদন্তকারী অফিসার, প্রশাসনের এক কর্তা ও চিকিৎসক এসে আমাদের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা আমাদের মামলার কোনও নথি ও অভিযোগপত্রের প্রতিলিপি দেননি। মেয়েটির ময়না-তদন্তের রিপোর্ট আমাদের দেওয়া হয়নি।’’ তিনি অভিযোগ করেন, ওই নাবালিকাকে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ময়না-তদন্তের বাকি দুই চিকিৎসককে প্রশাসন তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনও তাঁদের সঙ্গে অসহযোগিতা করেছে। প্রিয়ঙ্কর দাবি, প্রয়োজনে, ওই মামলার সঙ্গে যুক্ত পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের দিল্লিতে তলব করা হবে।
রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় ও উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তীর দাবি, জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ও রাজনীতি করতে পুলিশ, প্রশাসন ও রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে। কেন্দ্রীয় ওই দলের সদস্যেরা ইচ্ছে করে রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে আসেননি।
রায়গঞ্জ পুলিশ-জেলার সুপার মহম্মদ সানা আখতার বলেন, “ওঁরা ঠিক কথা বলছেন না। তদন্তকারী পুলিশ কর্তারা ওঁদের সঙ্গে দেখা করে আইন মেনে মামলার বিবরণ ও তথ্য দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় দল আবেদন করলে, নিয়ম মেনে তাঁদের ময়না-তদন্তের রিপোর্ট দেওয়া হবে।’’