উত্তরবঙ্গের চা বাগানে প্রতিদিনের কাজ। নিজস্ব চিত্র
সবুজ পাতার আড়ালে থাকা ছোট্ট কুঁড়ি প্রতিদিন খুঁজে খুঁজে কি চোখের রোগ বাধাচ্ছেন চা শ্রমিকেরা? চা মহল্লায় চোখ পরীক্ষার পরে উঠে আসা তথ্য এই প্রশ্নই তুলে দিয়েছে। উত্তরে বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ দাবি করছেন, শুধু চোখের উপরে চাপ পড়াই নয়, চা শ্রমিকদের চোখের রোগ বৃদ্ধির প্রবণতার পিছনে অপুষ্টি থেকে শুরু করে অবহেলা এবং কীটনাশকের ব্যবহারের মতো কারণও রয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরে অসমের চা শ্রমিকদের চোখ পরীক্ষার কাজ করছে জাতীয় স্তরের একটি সংস্থা, যারা দৃষ্টিশক্তি নিয়েই কাজ করে থাকে। সেই সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করছে চা পর্ষদ তথা টি বোর্ড। সংস্থার রিপোর্ট, অসমে প্রায় ৭৬ শতাংশ চা শ্রমিকের চোখে কোনও না কোনও রোগ রয়েছে। সেই সংস্থা এখন উত্তরের চা শ্রমিকদেরও দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষার কাজ করছে। যে কাজ শুরু হয়েছে ছোট চা বাগান দিয়ে। দিন কয়েকের পরীক্ষার পরে চমকে ওঠার মতো তথ্য উঠে এসেছে বলে দাবি সংস্থাটির। এখানকার চা শ্রমিকদের মধ্যেও চোখের সমস্যা ধরা পড়ছে অনবরত। মূল সমস্যা হল দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার। তার সঙ্গে ছানি বা রেটিনার সমস্যা রয়েছে। তবে সংস্থার দাবি, সকলের ক্ষেত্রেই মূল সমস্যা দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যাওয়া।
এর কারণ হিসেবে সংস্থাটির দাবি, চড়া রোদ বা বৃষ্টিতে এক নাগাড়ে পাতা তুলে যেতে হয় চা শ্রমিকদের। খুঁজে খুঁজে ছোট পাতা বা কুঁড়ি তুলতে হয়। প্রতিদিন এই খোঁজার কাজে চোখের উপর টানা চাপ পড়ে। কিন্তু সেই জোর সামাল দিতে চোখের যে যত্নের প্রয়োজন হয়, তা শ্রমিকেরা পান না। সেই সঙ্গে রয়েছে পুষ্টির বড়সড় সমস্যা। সংস্থার তরফে অলকানন্দা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা শ্রমিকদের থেকে খাদ্যাভ্যাস জেনেছি। বেশির ভাগ শ্রমিকই পুষ্টিকর খাবার পান না। ফলে দরকারি পুষ্টির জোগানের অভাবে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। তা ছাড়া, আরও একটা বড় কারণ অবহেলা। কোনও শ্রমিকের চোখের একটু সমস্যা তৈরি হলে, সেটা জেনেও তিনি চিকিৎসকের কাছে যান না। সেই সঙ্গে চা বাগানে কীটনাশক ছড়ানো হলে তার প্রভাবও পড়তে পারে।”
এ বিষয়ে একমত বিশেষজ্ঞেরাও। জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চোখের চিকিৎসার বিভাগীয় প্রধান গঙ্গোত্রী বারুই বলেন, “ভিটামিন এ’র অভাবে বাচ্চাদের চোখের সমস্যা হয়। বয়স্কদের চোখ পরীক্ষা সময় মতো করা না হলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিছু চা বাগানে, বিশেষ করে বড় চা বাগানগুলোতে শিবির করে চোখের চিকিৎসা হয়। তবে ছোট বাগানগুলোতে সে ভাবে শিবির হয় না। সচেতনতার অভাব রয়েছে বাগানের বাসিন্দাদের।’’ পেট খারাপ বেশি হলে চোখের সমস্যা হতে পারে। মা অপুষ্টিতে ভুগলে শিশুর শরীরে জন্ম থেকেই ভিটামিনের অভাব ঘটবে বলে দাবি তাঁর। চা শ্রমিকদের দৃষ্টিজনিত তথ্য যে যথেষ্ট উদ্বেগের তা স্বীকার করে ছোট চা বাগানের সর্বভারতীয় সংগঠনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “এত সংখ্যায় শ্রমিক চোখের সমস্যা ভুগছেন, জানতামই না। আমরা সকলকে চশমা দিচ্ছি।”