কোচবিহারের পর এ বার আলিপুরদুয়ারে সভা করতে আসছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে উত্তরবঙ্গ সফরে এসেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কোচবিহারের পর এ বার আলিপুরদুয়ারে সভা করতে আসছেন তিনি। আলিপুরদুয়ারের ১ নম্বর ব্লকের বাবুরহাট মাঠে অভিষেকের সভার প্রস্তুতি প্রায় শেষ লগ্নে। শনিবারের সভার জন্য তৈরি সেজে উঠেছে মাঠ। সভামঞ্চের পিছনেই রয়েছে অস্থায়ী হেলিপ্যাড। শুক্রবার সেখানে শেষ হয়েছে ট্রায়াল রান। কলকাতা থেকে চপারে করে সরাসরি শনিবার বেলায় উপস্থিত হবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে অভিষেকের এই সভা তৃণমূলের কাছে বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, গত লোকসভা কিংবা বিধানসভা ভোটে আলিপুরদুয়ার-সহ উত্তরবঙ্গে মোটেই আশানুরূপ ফল করতে পারেনি রাজ্যের শাসকদল। ওই সব জেলায় রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির দিকে পাল্লা ভারী। পাশাপাশি তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের ঘটনাও বার বার প্রকাশ্যে এসেছে। এমনকি শীর্ষ নেতৃত্বের পদক্ষেপের পরও এই পরিস্থিতির বিশেষ কোনও উন্নতি পরিলক্ষিত হয়নি। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এমন জেলাগুলিতেই বাড়তি নজর দিচ্ছেন অভিষেক তথা তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। শনিবার তৃণমূল নেতাকর্মীদের ওই সভা থেকে অভিষেক বিশেষ বার্তা দিতে পারেন। আবার পঞ্চায়েত ভোটের আগে সংগঠনের মধ্যে রদবদল হলেও অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবে না।
এর আগে কোচবিহারের মাথাভাঙার সভা থেকে দলের জেলার নেতাদের একাধিক নির্দেশ দিয়েছিলেন অভিষেক। পাশাপাশি তাঁর ‘চমক’ ছিল বিএসএফের গুলিতে নিহত হওয়া রাজবংশী যুবক প্রেমকুমার বর্মণের বাবা-মাকে আচমকা মঞ্চে তুলে আনা। সেখান থেকে কেন্দ্রীয় স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে যেমন নিশানা করেন অভিষেক, তেমনই স্থানীয় সাংসদ তথা শাহের ডেপুটি নিশীথ প্রামানিকের বিরুদ্ধেও তোপ দাগেন। ঘটনাক্রমে নিশীথের বাড়ি ঘেরাও করে প্রতিবাদ করে তৃণমূল। তার আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের সভায় তৃণমূল স্তরের অনুগত এবং সৎ দলীয় কর্মী এবং এক সাধারণ ভোটারকে মঞ্চে তুলে এনে ‘নতুন তৃণমূল’-এর উদাহরণ দিয়েছিলেন অভিষেক। শনিবার আলিপুরদুয়ারের সভাতেও তেমন কোনও ‘অপ্রত্যাশিত ঘটনা’ ঘটে কি না, সে দিকে নজর থাকবে।
অভিষেকের আলিপুরদুয়ারের সভায় বিশাল জনসমাগমের লক্ষ্য নিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি প্রকাশ চিক বরাইক আত্মবিশ্বাসের সুরে বলেন, ‘‘অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের জনসভায় কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার— এই তিন জেলা থেকে প্রায় এক লক্ষ কর্মী-সমর্থকের ভিড় হবে। সভা দুপুর ২টোয় শুরু হলেও বাবুরহাট মাঠের সভায় সকাল থেকেই কর্মীদের ভিড় উপচে পড়বে।’’ একই কথা বলছেন আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান মৃদুল গোস্বামীও। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের জেলায় ১,২০০ বুথ রয়েছে। প্রতিটি বুথ থেকে কর্মী এবং সমর্থকদের জনসভা প্রাঙ্গণে আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই ভার রয়েছে দলের বুথ সভাপতিদের উপর।’’
সভার প্রস্তুতিও প্রায় শেষের পথে। এ নিয়ে আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, ‘‘অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের জনসভা ঘিরে শহর জুড়ে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় নজরদারির পাশাপাশি যাতায়াতের পথে বিভিন্ন গাড়িগুলোতেও বাড়তি নজরদারি চালানো হচ্ছে।’’
বিগত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে আলিপুরদুয়ার, দুই দিনাজপুর, বাঁকুড়ার মতো জেলাগুলোতে আশানুরূপ ফল করেনি তৃণমূল। ওই সব জেলাতে পাল্লা ভারী বিজেপির। ওই সমস্ত এলাকায় শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বার বার প্রকাশ্যে এসেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই সব জেলাতে বাড়তি নজর দিতেই অভিষেকের এই জেলাসফর। কালীঘাটের বৈঠক থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করেছেন গোষ্ঠী কোন্দল নিয়ে। নেতাদের বুথস্তরের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ আরও দৃঢ় করতে বলেছেন। পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরকারি প্রকল্পের সুবিধার কথাও তুলে ধরার কথা বলেছেন। আলিপুরদুয়ারের সংগঠনের রাশ আলগা বলেই অভিযোগ রয়েছে। এই সফরে বাড়তি নজর দেবেন অভিষেক। সংগঠন ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করতে চান অভিষেক বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।