ভুল রক্ত দেওয়ায় এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের ঘটনা। প্রতিবাদে মৃতার আত্মীয়েরা আলিপুরদুয়ার চৌপথীর কাছে বক্সা ফিডার রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান৷ বিক্ষোভ দেখানো হয় হাসপাতালেও৷ কর্তৃপক্ষ তদন্তের নির্দেশ দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়৷ পুলিশের কাছেও অভিযোগ জানায় প্রসূতির পরিবার৷
পুলিশ সূত্রের খবর, কোচবিহারের পুন্ডিবাড়ির ঘরঘরিয়া এলাকার বাসিন্দা গত রবিবার আলিপুরদুয়ার চৌপথীর কাছে একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হন রিঙ্কি দাস (২২)৷ রাতে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি৷ তাঁর বাড়ির লোকেরা জানিয়েছেন, সোমবার নার্সিংহোমের তরফে রিঙ্কির জন্য এবি নেগেটিভ রক্ত জোগাড় করতে বলা হয়৷ তাঁরা আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের ব্ল্যাড ব্যাঙ্ক থেকে ওই গ্রুপের রক্ত জোগাড় করেন৷ মৃতার স্বামী সঞ্জয় দাসের অভিযোগ, ‘‘ওই রক্ত আমার স্ত্রীকে দেওয়ার পরেই ওর শারীরিক অবস্থা অবনতি হতে শুরু করে৷ অবস্থা খারাপ হতে থাকায় মঙ্গলবার রিঙ্কিকে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের আইসিইউয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও অবস্থার অবনতি হতে থাকায় রাতে ওঁকে কোচবিহারের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়৷ বুধবার রাতে সেখানেই মারা যান উনি৷’’
সঞ্জয়বাবু জানান, কোচবিহারের নার্সিংহোমে ছ’বার তাঁর স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা হয়৷ কিন্তু প্রতিবারই রক্তের গ্রুপ এবি পজিটিভ বেরোয়৷ তাঁর অভিযোগ, ‘‘অথচ নার্সিংহোম থেকে রক্তের নমুনা ও রিকুইজিশন-সহ এবি নেগেটিভ রক্ত জোগাড় করতে বলা হয়েছিল৷ ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকেও রক্তের নমুনা পরীক্ষা না করেই এবি নেগেটিভই দেওয়া হয়। ওদের স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে৷’’
ঘটনার প্রতিবাদে এদিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ নার্সিংহোমের সামনেই বক্সা ফিডার রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান মৃতার আত্মীয়েরা৷ ঘণ্টাখানেক ধরে বিক্ষোভের পর পুলিশ অবরোধ তোলে৷ তারপর মৃতার আত্মীয়েরা আলিপুরদুয়ার হাসপাতালেও ধর্নায় বসেন৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি আলিপুরদুয়ার থানাতেও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা৷
অভিযুক্ত ওই বেসরকারি নার্সিংহোমের ডিরেক্টর মানিক সরকার বলেন, ‘‘ নার্সিংহোমে আলাদা করে ওই মহিলার রক্ত পরীক্ষা হয়নি৷ গর্ভবতী থাকাকালীন তাঁর আগের রিপোর্টে উল্লিখিত রক্তের গ্রুপ দেখেই রিকুইজেশনে এবি নেগেটিভ রক্ত দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল৷ রক্তের নমুনাও ব্ল্যাড ব্যাঙ্কে পাঠানো হয়েছিল৷ নিয়ম অনুযায়ী, আমরা রিকুইজেশনে যা-ই লিখি না কেন, নমুনা রক্তের ক্রস ম্যাচিংয়ে যে গ্রুপ উঠে আসবে ব্লাড ব্যাঙ্ক সেই রক্তই দেবে৷’’
জেলা হাসপাতালের সুপার চিন্ময় বর্মণ বলেন, ‘‘নমুনা পরীক্ষা করে আমরাও ওই মহিলার রক্তের গ্রুপ এবি নেগেটিভ পেয়েছি৷ কোচবিহারের নার্সিংহোম কেন এবি পজিটিভ রক্তের কথা বলছে তা বুঝতে পারছি না৷’’ হাসপাতালের তরফে ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে বলে সুপার জানান৷