আলোকিত মঞ্চে পাল্লা দিল লক্ষ্মীরাও

লেসার আলো ঠিকরে পড়া দীনবন্ধু মঞ্চের একপাশে জড়ো করে রাখা কয়েক জোড়া সস্তার প্লাস্টিকের চটি। রংচটা, কোনটার ফিতে সেফটিপিন দিয়ে আটকানো। দর্শকাসনের সামনের সারিতে প্রশাসনিক আধিকারিকরা, একপাশে তাঁদের উর্দিধারী নিরাপত্তা রক্ষীরা। লম্বা লেন্সওয়ালা ক্যামেরা হাতে কয়েকজন আশেপাশে। ভিড়ে ঠাসা প্রেক্ষাগৃহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৬ ০২:৩৯
Share:

কন্যাশ্রী দিবসে স্কুলছুট পড়ুয়াদের অনুষ্ঠান। শিলিগুড়িতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

লেসার আলো ঠিকরে পড়া দীনবন্ধু মঞ্চের একপাশে জড়ো করে রাখা কয়েক জোড়া সস্তার প্লাস্টিকের চটি। রংচটা, কোনটার ফিতে সেফটিপিন দিয়ে আটকানো। দর্শকাসনের সামনের সারিতে প্রশাসনিক আধিকারিকরা, একপাশে তাঁদের উর্দিধারী নিরাপত্তা রক্ষীরা। লম্বা লেন্সওয়ালা ক্যামেরা হাতে কয়েকজন আশেপাশে। ভিড়ে ঠাসা প্রেক্ষাগৃহ। জীবনে প্রথমবার এমন মঞ্চে ওঠার আগে সমীহের কারণেই চটিগুলো খুলে রেখেছিল খুশি-পায়েল-লক্ষ্মীদের কয়েকজন। আলো মুখে এসে পড়ায় প্রথমে চোখগুলো কুঁচকে গিয়েছিল ওদের। জড়তা কাটার পরের পনেরো মিনিট ডান্স-ড্রামা পরিবেশনে মঞ্চের দখল নিল ওরাই। ওরা সকলেই শিলিগুড়ির বিভিন্ন বস্তির বাসিন্দা। একসময়ে স্কুলে ভর্তি হলেও আর্থিক-পারিবারিক নানা কারণে মাঝপথে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ফের সকলকে স্কুলে পাঠিয়েছে। সেই সংগঠনই নাচ-গানের মহড়া দিয়ে রবিবার ওদের হাজির করেছিল কন্যাশ্রী দিবসের সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চে। শহরের প্রথম সারির স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে পাল্লা দিল ওরাও।

Advertisement

শিলিগুড়ির দীনবন্ধ মঞ্চে মহকুমা স্তরের কন্যাশ্রী দিবসের অনুষ্ঠান হয়েছে। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব। উপস্থিত ছিলেন মহকুমা শাসক পানিক্কর হরিশঙ্কর-সহ মহকুমা প্রশসানের তাবড় আধিকারিকেরা। মহকুমার সব স্কুলের শিক্ষক-পড়ুয়া ঠাসা দীনবন্ধু মঞ্চের অডিটোরিয়ামের এক কোনায় জড়সর হয়ে বসেছিল খুশি-পায়েলদের ১৩ জনের দল। শিলিগুড়ি গার্লস, জ্যোৎস্নাময়ী বালিকা বিদ্যালয় সহ শহরের স্কুলগুলির অনুষ্ঠানের মধ্যে ডাক পড়ে ওদেরও। নাচে-গানে বস্তির দুই পরিবারের গল্প ফুটিয়ে তোলে ওরা। একটি পরিবারে মেয়েকে পড়ানো হচ্ছে, অন্য পরিবারে মেয়েকে কাজে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে, যেতে দেওয়া হচ্ছে না স্কুলে। সেই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে স্কুলে ফিরতে পারাই ছিল ওদের অনুষ্ঠানের গল্প।

অনুষ্ঠানের নির্দেশক লক্ষ্মী ছেত্রীর কথায়, ‘‘এটা ওদের নিজেদের কাহিনি বলা যায়। সে কারণে মঞ্চে অভিনয় করলেও বাস্তবে সব ঘটনাই ওরা পার করে এসেছে।’’ শহরের একটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী খুশি। বাবা রিকশা চালক। তৃতীয় শ্রেণির পড়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গত বছর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ওর পরিবারকে বুঝিয়ে ফের স্কুলে পাঠিয়েছেন। এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মুখপাত্র শেখর সাহা বলেন, ‘‘যে ১৩ জন অনুষ্ঠান করেছে, সকলেই স্কুলছুট ছিল। ওদের লড়াইয়ের কথা জানানোর জন্য অনুষ্ঠানের সুযোগ চেয়ে প্রস্তাব করেছিলাম।’’

Advertisement

অনুষ্ঠানের শেষে তুমুল হাততালি শুরু হতেই সমস্ত রকমের জড়তা কেটে যায় ওদের। অনান্য স্কুলের কচিকাঁচাদের মতো সারা অডিটোরিয়ামে ছুটোছুটি করে খেলায় পাল্লা দিল ‘আত্মবিশ্বাসী’ খুশি-পায়েলরাও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement