বড় নালাগুলিতে জমে জঞ্জাল।—নিজস্ব চিত্র।
বর্ষাকালে শহরের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয় তা মানছেন আলিপুরদুয়ার পুরসভার চেয়ারম্যান আশিস দত্ত। তিনি এটাও মানছেন, প্রতি বছর ৫, ৮, ৯, ১৫, ১৮, ২০,সহ বিভিন্ন ওয়ার্ড টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে। সবচেয়ে অসুবিধায় পড়েন ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। সেখানে প্রয়োজনে নৌকা নামাতে হয়। তা ছাড়া ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পাশের কালজানি নদীর জল বেড়ে বিধানপল্লি ও মিলনপল্লি চরে বসবাসকারীদের অসুবিধা হয়।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রমোদনগর কলোনি, পূর্ব শান্তিনগর, সূর্য নগর, অরবিন্দনগর, বিধানপল্লি সহ বিভিন্ন এলাকায় জলমগ্ন হয় প্রতি বছর। প্রমোদনগর, বিধানপল্লি সহ বেশ কিছু এলাকার বাসিন্দারা নদীর জল বাড়লে ঘর ছেড়ে বাঁধের উপর খোলা আকাশের নীচে আশ্রয় নেন। সেই সময় শুকনো খাওয়ার থেকে মাথা গোঁজার জন্য ত্রিপলের ব্যবস্থা করতে হয় জেলা প্রশাসন ও পুরসভার তরফে। এতে এলাকার মানুষের দৈনন্দিন কাজের উপর প্রভাব পড়ে।
পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা বিরোধী দলনেতা অনিন্দ্য ভৌমিক বলেন, “আলিপুরদুয়ার শহরের জল জমার সমস্যা দীর্ঘ দিনের। শহরটি কার্যত পুকুরের মতো। কারণ চার ধারে রেললাইন ও বাঁধ রয়েছে। চার দিকই শহরের থেকে উঁচু। রেল লাইনের কালভার্ট দিয়ে বাইরের এলাকার প্রচুর জল শহরে ঢুকে পড়ে। যা বার হওয়ার রাস্তা পায় না।’’
এ ছাড়াও শহরের নিকাশি নালাগুলির উপর দখল করে যথেচ্ছ বাড়ি ও দোকান তৈরি হওয়ায় জল নিকাশির সমস্যা রয়েছে। জলাশয়গুলি দখল হয়ে যাওয়ায় জল ধারণের ক্ষমতাও কমে গিয়েছে। জলমগ্ন শহরের জল নিকাশির জন্য মাস্টারপ্ল্যান তৈরি দরকার। শহরের উত্তরদিকে ঢাল রয়েছে। শহরের ১, ৩ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড নিচু হওয়ায় সেখান দিয়ে খাল কেটে জল নোনাই নদীতে ফেলার ব্যবস্থা হলে বর্ষার সময় জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই দূর হবে। এ ছাড়াও শহরের ১২টি স্লুইস গেট রয়ছে সেগুলির সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। নদীগুলিতেও নাব্যতা বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে।”
পুরসভার চেয়ারম্যান আশিসবাবু বলেন, “নিকাশি নালাগুলি পরিষ্কার করা হয়েছে। বড় বড় জলাশয়গুলিও সংস্কার করা হয়েছ যাতে বর্ষার জমা জলে সেখান না জমে। জল নিকাশির জন্য এ বছর উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ৫টি পাম্প সেট কেনা হয়েছে। তা ছাড়া পুরনো ছ’টি পাম্প রয়েছে। সেগুলি চালিয়ে শহরের জমা জলে আগে থেকেই বের করা হচ্ছে।’’ তবে তিনি বলেন, ‘‘এত পাম্প থাকলেও কিছু এলাকা জলমগ্ন হতেই পারে। শুকনো খাবার ও ত্রিপল দেওয়া হবে। প্রয়োজন পড়লে রান্না করা খাবার আমরা দেব।”
এ বছর বিদ্যুতের ট্রান্সফরমারগুলিও আধিকারিকদের বলে উঁচুতে লাগানো হয়েছে। যাতে জল বাড়লে বিদুৎ চলে না যায়। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআই কাউন্সিলর সুভাষ কর চৌধুরি বলেন, “প্রতি বছর বর্ষায় পিলখানা এলাকা নেতাজিপল্লি ও সূর্যনগর এলাকার একাংশ জলমগ্ন হয়। তবে এবছর নতুন পাম্প সেট বসায় এখনও অসুবিধের সৃষ্টি হয়নি।”
তৃণমূল কংগ্রেসের আলিপুরদুয়ারের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী শহরেরই বাসিন্দা। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার আলিপুরদুয়ার পুর এলাকার রাস্তা সম্প্রসারণ ও সংস্কার, নিকাশি ব্যবস্থা ও পথবাতির জন্য বেশ কয়েক কোটি টাকা বিভিন্ন দফতর থেকে বরাদ্দ করেছে। শহরে জল জমার সমস্যা রয়েছে। ইতিমধ্যে পুরসভার চেয়ারম্যানকে নিয়ে আমি পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে দেখা করে উন্নয়নের আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ করিয়েছি। তা ছাড়া বিভিন্ন দফতর থেকে রাস্তার জন্য প্রায় ১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়ে কাজ শুরু হয়েছে।”