আবর্জনা: শিলিগুড়ির পাশে মহানন্দার এখন এই অবস্থা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
প্রথম পঞ্চাশে মহানন্দা ও তিস্তা!
তবে গর্বিত হওয়ার মতো কোনও বিষয় নয়। এই তালিকা দেশের সব থেকে দূষিত নদীগুলির। সেখানে পঞ্চাশের মধ্যে রয়েছে এই দুটি নদী। দুটি নদীই উত্তরবঙ্গের ‘লাইফ লাইন’ বা জীবনরেখা হিসেবে পরিচিত। অথচ সেবকের কাছে তিস্তার পাশে গিয়ে দাঁড়ান, বা শিলিগুড়ির পাশে মহানন্দায়। হয় দেখবেন নদীর বুক থেকে বেআইনি ভাবে তোলা হচ্ছে বালি-পাথর। অথবা দেখবেন, শহরের যাবতীয় বর্জ্যে ভরে গিয়েছে নদীখাত।
মানুষ-পশুর মলমূত্র, শহরের নানাবিধ জঞ্জাল থেকে শুরু করে যাবতীয় বর্জ্যে উপচে পড়ছে মহানন্দা। শিলিগুড়ির কাছে তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে, সেই জলে হাত-পা ধুলেও চর্মরোগ হওয়ার প্রভূত আশঙ্কা। আর ওই জল পেটে গেলে তো ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে যেতে পারে।
এ সবই জাতীয় নদী সংরক্ষণ অধিকর্তার দফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঠিক। এর ফলে মহানন্দায় মাছের সংখ্যাও কমেছে। সেই জলে বাসন মাজা, কাপড় কাচার ফলে জীবাণু ঢুকছে অন্দরমহলেও।
তুলনায় তিস্তার জল কম দূষিত। তবে সেবক থেকে জলপাইগুড়ি শহর অবধি তিস্তার অংশে মাত্রাছাড়া দূষণ। ফলে সেখানেও কমেছে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী।
দেশের সর্বাধিক দূষিত নদীগুলির একটি তালিকা প্রকাশ করেছে জাতীয় নদী সংরক্ষণ অধিকর্তা তথা ন্যাশনাল রিভার কনজারভেশন ডিরেক্টরেট (এনআরসিডি)। তিনশোটি নদীর নাম রয়েছে তালিকায়। তার মধ্যে উত্তর-পূর্ব ভারতের পঞ্চাশটি নদী রয়েছে। সেই তালিকাতেই রয়েছে তিস্তা-মহানন্দা। রয়েছে জলপাইগুড়ি শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া করলা নদীও। তবে করলার গতিপথ বাকি দুই নদীর তুলনায় কম। করলার মিশেছে তিস্তাতেই। তাই তিস্তা নিয়েই উদ্বেগ বেশি পরিবেশ প্রেমীদের। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রের কথায়, ‘‘রাজ্যের বিভিন্ন নদীর জলের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়মিত রিপোর্ট পাঠানো হয়।’’
মহানন্দা নিয়ে একাধিকবার প্রশাসনকে সর্তক করেছে পর্ষদ। বছরখানেক আগে মহানন্দার জলের নমুনা পুরীক্ষার রিপোর্টে পর্ষদকর্তারাও চমকে উঠেছিলেন। তখনই ধরা পড়ে, জলের অবস্থা খুবই খারাপ। তাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে গত ডিসেম্বরের রিপোর্টের ফল। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মাপকাঠি অনুযায়ী, নদীর জলের প্রতি ১০০ মিলিলিটার নমুনায় ফেকাল কলিফর্ম নামে একটি বিষাক্ত জীবাণুর উপস্থিতির মাত্রা ৫০০ ইউনিট অথবা তার কম হলে বুঝতে হবে, জল ঠিক আছে। গত ৬ ডিসেম্বর মহানন্দা নদীর থেকে সংগ্রহ করা নমুনায় প্রতি ১০০ মিলিলিটারে ফেকাল কলিফর্মের মাত্রা ছিল ১ লক্ষ ৭০ হাজার ইউনিট। ছিল অন্য ক্ষতিকারণ উপাদানও। ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসুর কথায়, ‘‘একসময় জীবনদায়ী এই নদী এখন মৃত্যুর কারণও হতে পারে।’’
গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে তিস্তায় ফেকাল কলিফর্মের মাত্রা ছিল একশো মিলিলিটার জলে গড়ে প্রায় ৭ হাজার। তবে তিস্তার দূষণ মহানন্দার তুলনায় কম। সেবক থেকে জলপাইগুড়ির পাহাড়পুর পর্যন্ত নদীর দু’পাশে কারখানা, ধাবা, চা বাগানের বর্জ্য ফেলা হয়। ছড়ানো হয় কীটনাশক। এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন পরিবেশ কর্মীরা। পরিবেশপ্রেমী রাজা রাউতের কথায়, ‘‘কলিফর্ম এমন একটি বিষ যা মানুষকে ধীরে ধীরে গভীর অসুখের দিকে নিয়ে যাবে। প্রাথমিক ভাবে পেটের রোগ হবে তার পরে সংক্রমণ ছড়াতে পারে অন্যান্য অংশেও।’’