আবর্জনা: থার্মোকলের থালা ছড়িয়ে। নিজস্ব চিত্র
যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে থার্মোকলের থালা, বাটি ও গ্লাস। হাওয়া দিলে সে সব উড়েও বেড়াচ্ছে। কোথাও আবার জমে রয়েছে আবর্জনার স্তুপ, দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সেই সঙ্গে, উচ্চশব্দে বাজানো হচ্ছে সাউন্ডবক্সও। পিকনিকের মরসুম শুরু হতেই বন দফতরের নজরদারির অভাবে গত একসপ্তাহ ধরে রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষিনিবাসের পিকনিক স্পটে এ ভাবেই পরিবেশ ও শব্দদূষণ ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ওই পিকনিক স্পটে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার লক্ষাধিক পর্যটক পিকনিক করার জন্য ভিড় জমান। তাই প্রতি বছরই পিকনিকের মরসুমের মাঝামাঝি সময়ে বন দফতরের নজরদারির অভাবে ওই পিকনিক স্পটে কমবেশি দূষণের অভিযোগ উঠলেও এ বারে মরসুমের শুরুতেই লাগামহীন ভাবে দূষণ ছড়ানোর অভিযোগে উদ্বিগ্ন উত্তর দিনাজপুরের বিভিন্ন পরিবেশ ও পশুপ্রেমী সংগঠন। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বন দফতরের ভূমিকায় ক্ষোভও ছড়িয়েছে।
রায়গঞ্জের বিভাগীয় বনাধিকারিক দ্বীপর্ণ দত্তের দাবি, দফতরের কর্মীর অভাবে পিকনিক মরসুমে নজরদারি চালানো যায় না। এ বছর দূষণ রুখতে স্থানীয় ইকো ডেভেলপমেন্ট কমিটিকে স্পটে কড়া নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশেরও সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। তার পরেও দূষণ রোখা সম্ভব না হলে পরিবেশকে বাঁচাতে আগামী বছর থেকে ওই স্পটে পিকনিক নিষিদ্ধ করার কথা ভাবা হচ্ছে।
পরিবেশ দূষণ রুখতে ও পরিযায়ী পাখিদের অবাধ বিচরণের স্বার্থে ২০০৮ সালে কুলিক পক্ষিনিবাসের সংরক্ষিত এলাকায় পিকনিক নিষিদ্ধ করে বন দফতর। তবে বাসিন্দারা যাতে পিকনিক করতে পারেন, তার জন্য বন দফতর ২০১০ সালে পক্ষিনিবাসের অসংরক্ষিত এলাকার ২৫ বিঘা জমিতে পিকনিক স্পট গড়ে তোলে। ২৫ ডিসেম্বর থেকে সেখানে পিকনিক শুরু হয়েছে। অভিযোগ, সেই থেকে বন দফতরের নজরদারির অভাবে পর্যটকদের একাংশ স্পটের যত্রতত্র থার্মোকলের থালা, বাটি, গ্লাস ফেলছেন। পিকনিকের ফেলে যাওয়া বিভিন্ন খাবার ও ভিজে আবর্জনা পচে গিয়ে দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে। পিকনিক চলাকালীন পর্যটকদের একাংশ উচ্চশব্দে সাউন্ডবক্স বাজাচ্ছেন।
ইটাহারের বানবোল হাইস্কুলের সহকারী প্রধানশিক্ষক তথা পরিবেশপ্রেমী চন্দ্রনারায়ণ সাহার বক্তব্য, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও পরিযায়ী পাখিদের স্বার্থে পিকনিক স্পটে পরিবেশ ও শব্দদূষণ রুখতে বন দফতরের অবিলম্বে সক্রিয় হয়ে নজরদারি বাড়ানো উচিত।
রায়গঞ্জ পিপল ফর অ্যানিম্যালের সভাপতি ভীমনারায়ণ মিত্র ও সম্পাদক অজয় সাহার দাবি, ‘‘বন দফতরের নজরদারির অভাবে পিকনিক স্পটে এ ভাবে পরিবেশ ও শব্দদূষণ চলতে থাকলে ভবিষ্যতে পরিযায়ীরা পক্ষিনিবাস বিমুখ হয়েই থাকবে বলে আশঙ্কা করছি।’’