চোপড়ার দাসপাড়ায় জখম চিকিৎসার জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।
২০০৩ থেকে ২০১৮, ১৫ বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু, উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া আছে চোপড়াতেই। সেই পঞ্চায়েত দখল নিয়ে একই রকম রক্তারক্তি। বোমা-গুলি-বল্লমের লড়াই। সেই একই ভাবে পুলিশের বিরুদ্ধে কোথাও নিষ্ক্রিয়তা, কোথাও অপেশাদারি মনোভাবের অভিযোগে সরব গ্রামবাসীরা। ক্ষোভ-অভিযোগের সার কথা হল, বাম জমানা থেকে তৃণমূল আমল, শাসক পাল্টালেও চোপড়ার গ্রামে রক্তারক্তি ঠেকাতে যে সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেওয়া জরুরি, তা নিতে পারছে না জেলা পুলিশ। ফলে, শাসক-বিরোধী, উভয় দলের সাধারণ কর্মী-সমর্থক থেকে হাট-বাজারের ব্যবসায়ী, ছাত্রছাত্রী, সকলেই দূষছেন পুলিশকে। যদিও পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়ালের দাবি, ‘‘সব প্রস্তুতিই ছিল। আচমকা পঞ্চায়েত অফিস থেকে অনেক দূরে এমন গোলমাল হবে ভাবা যায়নি। তবে তাড়াতাড়ি ঠেকানো হয়েছে।’’
খোদ তৃণমূল বিধায়ক হামিদুর রহমান মনে করছেন, গোলমাল ঠেকাতে ঠিকঠাক পরিকল্পনা নেওয়া হলে কেউ একটা লাঠি বার করার সাহস পেত না। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশকেই তৎপর হয়ে হামলাকারীদের গ্রেফতার করতে হবে। না হলে আমাদেরও আন্দোলনে নামার কথা ভাবতে হবে।’’
গ্রাম পঞ্চায়েতের সব আসনে তৃণমূল জিতলেও বোর্ড গড়ার দিনে দাসপাড়ায় গোলমাল হতে পারে, এই মর্মে রিপোর্ট দিয়েছিল রাজ্য গোয়েন্দা দফতর। নবান্ন থেকে সেই রিপোর্ট পেয়ে ১৪৪ ধারা জারিও হয়েছিল সেখানে। কিন্তু, নির্ধারিত এলাকার বাইরে যে গোলমাল হতে পারে, তা আঁচ করতে পারেনি চোপড়া থানা এবং জেলা পুলিশের কর্তারা। দাসপাড়া থেকে তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে নাহারগছ, খাটাখুয়া, নন্দিগছ-সহ নানা এলাকায় তৃণমূল-বিরোধীরা জড়ো হন বলে আক্রান্তরা জানিয়েছেন। তাদের রুখতে পরিকল্পনাও ঠিকঠাক না থাকায় দাসপাড়া অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে।
২০০৩ সালে সিপিএম নেতা আকবর আলি ভোটের ক’দিন আগে খুন হন। তা নিয়ে গোলমালের সময়ে পুলিশের গুলিতে তিন জন মারা যায়। পাল্টা চার জন কংগ্রেস কর্মী খুন হন। সেই থেকে প্রতি ভোটে চোপড়া মানেই রক্তারক্তি, গুলি-বোমা, লাঠি, বল্লমের লড়াই।
এ বারে পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিপিএম এবং কংগ্রেস একজোট হয়ে নামে। ভোট পর্বে চোপড়ায় ৩ জন খুন হয়েছেন। সিপিএম-কংগ্রেসের একাংশ ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, যে হেতু ভোটগ্রহণ ও গণনার সময়ে তাঁরা অংশ নিতে পারেননি, তাই বোর্ড গঠন তাঁরা সহজে মানতে পারবেন না।
কংগ্রেসের চোপড়া ব্লক সভাপতি অশোক রায় বলেন, ‘‘বাইরের দুষ্কৃতীরা ঢুকলে পুলিশ আটকাতে পারছে না।’’ সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী আনওয়ারুল হকের কথায়, ‘‘ভোটগ্রহণ থেকে গণনা, সবেতেই কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই প্রতিরোধ হচ্ছে।’’ যা শোনার পরে তৃণমূল বিধায়ক হামিদুর রহমানের মন্তব্য, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট বোর্ড গঠনের সম্মতি দেওয়ার পরেও প্রতিরোধের তত্ত্ব দিয়ে হামলাবাজি মানা যায় না।’’