ইসকন মন্দিরের রথের সামনে ঝাড়ু হাতে শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। ছবি বিনোদ দাস।
এক দিকে রশি ধরে বিজেপির সাংসদ রাজু বিস্তা, বিধায়ক আনন্দময় বর্মণেরা। অন্য দিকে, ধরেছেন শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি তৃণমূলের অরুণ ঘোষ, পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষেরা। দু’দিকে দু’দলের সমর্থকদের ভিড়। রবিবার নকশালবাড়ির রথযাত্রায় তৃণমূল এবং বিজেপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে এমনই ‘লড়াই’ দেখলেন পুণ্যর্থীরা।
একদা নকশাল আন্দোলনের পীঠস্থান নকশালবাড়িতে পদ্ম ফুটিয়েছিল বিজেপি। এ বার লোকসভাতেও এই ফাঁসিদেওয়া-নকশালবাড়ি বিধানসভায় ৮৩ হাজার ভোটে এগিয়ে সাংসদ রাজু বিস্তা। দু’বছর পরে, বিধানসভা ভোটে অরুণ ঘোষদের এই তালুক জিততে গেলে বড়সড় লড়াই দিতে হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। অন্য দিকে, বিজেপিকেও এই ফল ধরে রাখতে হবে। এ দিন কয়েকজন রসিক পুণ্যার্থীদের কথায়, জগন্নাথের সামনে রথের রশি টেনে সেই লড়াইয়েরই মহড়া দিল দুই দল।
জেলার বৃহত্তম এই রথের মেলায় লক্ষাধিক সমাগম হয়। এ দিনের মঞ্চে পাশাপাশি বসেছিলেন রাজু বিস্তা, আনন্দময় বর্মণ ও অরুণ ঘোষেরা। রাজু তাঁর নিজস্ব সংস্থা থেকে ৫ লক্ষ টাকা সেখানকার ইসকনকে দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। ধর্মীয় মঞ্চে অর্থ দানের ঘোষণায় রাজনৈতিক পারদ ছড়িয়েছে বেশি করে। মঞ্চেই তৃণমূলকে আক্রমণ করে সাংসদের অভিযোগ, শাসক দল নকশালবাড়ির বাসস্ট্যান্ড থেকে নিকাশি, রাস্তার উন্নয়নে সে ভাবে জোর দেয়নি। রাজুর বক্তব্য, ‘‘রাজনীতি ভুলে ধর্মীয় উৎসবে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি মাত্র।’’ আর সভাধিপতি অরুণ বলেন, ‘‘আমরা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করি না। আমাদের কাছে ধর্ম যার যার উৎসব সবার। যাদের সারাবছর দেখা যায় না তাঁরা উন্নয়ন দেখবেন কোন চোখে।’’
রথযাত্রার দিনে তৃণমূল এবং বিজেপির এমন লড়াই দেখা গিয়েছে শহরেও। শহরের ইসকন মন্দিরে রথযাত্রার উদ্বোধন করেছেন মেয়র গৌতম দেব, ছিলেন দার্জিলিং জেলা (সমতল) সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষ এবং দলের নেতারা। রথের সামনে রাস্তায় ঝাড়ু হাতে গৌতমদের দেখা গিয়েছে। বিজেপি নেতাদেরও দেখা গিয়েছে সেখানে। শহরের রাস্তায় বড় শোভাযাত্রা হয়েছে। শক্তিগড় গৌড়ীয় মঠের রথযাত্রায় মঞ্চ হয়েছে বিজেপির তরফে। বিধান মার্কেট, গেট বাজার, চম্পাসারি সর্বত্রই যেন তৃণমূল-বিজেপির রথের রশি নিয়ে একে অপরকে ছাপিয়ে যাওয়ার খেলা দেখা গেল দিনভর।