—ফাইল চিত্র
বিভাগীয় তদন্তের নামে অধীনস্ত তিন কর্মীকে নিজের ঘরে ডেকে কান ধরে ওঠবোস করানোর অভিযোগ উঠল শিলিগুড়ি কমিশনারেটের এক আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে। পুলিশ সূত্রের খবর, যে তিনজন পুলিশকর্মীকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে তাঁদেরই একজনের স্ত্রী ঘটনাটির বিষয়ে গত ১৫ নভেম্বর শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার ত্রিপুরারি অথর্বকে লিখিত অভিযোগ করেন। এমনকি ঘটনার কথা জানিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র এবং রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি।
যাঁদের ঘরে ডেকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে তাঁদের একজন সহকারী সাব ইন্সপেক্টর এবং বাকি দু’জন কনস্টেবল পদে মাটিগাড়া থানায় কর্মরত। ঘটনাটির বিষয়ে জানতে চেয়ে ফোন করলে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারের ফোন বেজে গিয়েছে। অভিযুক্ত আইপিএস তথা শিলিগুড়ি পুলিশের এসিপি (পশ্চিম) বিদিত রাজ ভুন্দেশ বিষয়টি জানেনই না বলে দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাকে তো কেউ কিছু বললেনি। এরকম কোনও অভিযোগ আমার জানা নেই।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, সহকারী সাব ইন্সপেক্টর সঞ্জিৎ দত্ত গত দুই বছর ধরে মাটিগাড়া থানায় কর্মরত। ৭ নভেম্বর তিনি রাত ১০টা থেকে এশিয়ান হাইওয়ে এবং লাগোয়া এলাকায় ভ্যান ডিউটিতে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে গাড়িতে দু’জন কনস্টেবল আর চালক ছিলেন। পরেরদিন, ৮ নভেম্বর ভোরে বালাসন সেতুর কাছে ভ্যানটি দাঁড়িয়েছিল। সেই সময় ওই এসিপি বাগডোগরার দিক থেকে ফিরছিলেন। তিনি ভ্যানটিকে দেখে দাঁড়ান। ভ্যান দাঁড় করিয়ে টাকা তোলা হচ্ছিল বলে এসিপি অভিযোগ করেন। যদিও কর্মরত অফিসারেরা জানান, চা খেয়ে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য তাঁরা দাঁড়িয়েছেন।
অভিযোগ, ওইদিনই দুপুর সাড়ে তিনটা নাগাদ টেলিফোন করে বিভাগীয় তদন্তের জন্য তিনজনকে দফতরে ডেকে পাঠান অভিযুক্ত পুলিশকর্তা। সহকারী সাব ইন্সপেক্টরের স্ত্রী প্রিয়া দত্তের অভিযোগ, ‘‘এসিপি মনগড়া অভিযোগ করেছেন। এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে, ফুটেজে যদি দেখা যেত আমার স্বামী কোনও অনৈতিক কাজ করছেন তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। তা না করে উনি দফতরে ডেকে পাঠিয়ে তিনজনকে আধঘণ্টা কানধরে ওঠবোস করিয়েছিলেন।’’ প্রিয়াদেবীর অভিযোগ, টাকা আদায় করা হয়েছে বলে লিখিয়ে নিতে চেয়েছিলেন ওই পুলিশকর্তা। তিনি বলেন, ‘‘আমি মুখ্যমন্ত্রী থেকে ডিজি, পুলিশ কমিশনার সবাইকে লিখিত অভিযোগ করে বিচার চেয়েছি।’’
প্রিয়াদেবীর বক্তব্য, দুই কনস্টেবল কান ধরে ওঠবোস করতে না পেরে মাটিতে বসে পড়েছিলেন বলে শুনেছি। তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বামীর ২০১৬ সালে পায়ের লিগামেন্টের অস্ত্রোপচার হয়েছে। উনি তা বলার পরেও এসিপি শোনেননি। ঘটনার পরে উনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। হাঁটতে পারছেন না। আগামী শনিবার মাটিগাড়ার একটি নার্সিংহোমে ওঁর পায়ে আবার অস্ত্রোপচার করাতে হচ্ছে।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, বর্তমানে ওই অফিসারকে লাইনে ডিউটি দিয়ে রাখা হয়েছে। যদিও চিকিৎসা সংক্রান্ত কারণে তিনি কাজে যোগ দিতে পারেননি। ইতিমধ্যেই ওই দুই কনস্টেবলের একজন ৬০ বছর হওয়ায় অবসর নিয়েছেন। আর একজন অবসরের দোরগোড়ায়।
পুলিশের বিভিন্ন স্তর থেকে ঘটনার নিন্দা করা হয়েছে। শিলিগুড়ির পুলিশের ডিসি এবং এসিপি স্তরের কয়েকজন অফিসার জানান, বাহিনীর কেউ কোনও দোষ করেছে মনে হলে তদন্তের সংস্থান রয়েছে। দোষ প্রমাণ হলে শাস্তির ব্যবস্থাও রয়েছে। সেসব না করে এমন ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় বলে জানাচ্ছেন পুলিশকর্তাদের একাংশ।