মহিলাকে গণধর্ষণের অভিযোগের তদন্তেপুলিশের ভূমিকা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। প্রতীকী ছবি।
আদিবাসী মহিলাকে গণধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত নিয়ে কি প্রথম থেকেই শিথিলতা ছিল? একাধিক ঘটনায় তদন্তে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সে প্রশ্নই উঠেছে। পরিবার সূত্রের দাবি, ঘটনার পরে, নির্যাতিতা হাসপাতালে ভর্তি হলেও তখনই বয়ান নিতে ‘হাজির হয়নি’ পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ পাওয়ার পরে, বয়ান নেওয়া এবং বয়ান নেওয়ার পরেও ধর্ষণের মামলা রুজু করার ক্ষেত্রে গড়িমসি ছিল বলেই অভিযোগ তুলছেন মৃতার আত্মীয়েরা এবং বিজেপি। যদিও পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা গাফিলতির অভিযোগ খারিজ করেছেন জেলা পুলিশ সুপার রাহুল দে। পুলিশ জানায়, শনিবার রাত পর্যন্ত কোনও অভিযুক্ত ধরা পড়েনি।
গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পরে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গিয়েছেন গঙ্গারামপুরের এক আদিবাসী মহিলা। কিন্তু আক্রান্ত হওয়া থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত পদে পদে নানা গাফিলতির অভিযোগ তুলছেন মৃতার আত্মীয়া এবং রাজনৈতিক দলগুলি। প্রাথমিক ভাবে মারধরের আঘাত নিয়ে যখন মহিলা হাসপাতালে ভর্তি হন, তখনই বিধিসম্মত ভাবে হাসপাতাল থেকে ঘটনার কথা পুলিশকে জানানো হয়। এ ক্ষেত্রেও তা-ই করা হয়েছিল বলেই দাবি জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে। কিন্তু তার পরেও কি পুলিশ এলাকায় গিয়েছিল? অভিযুক্তদের গ্রামে গিয়েছিল?
মৃতার এক আত্মীয়া বলেন, ‘‘ঘটনা জানাই থানায়। কিন্তু পুলিশ আসে ভাইঝি (নির্যাতিতা) মারা যাওয়ার আগের দিন।’’ বুধবার মৃতার ঘনিষ্ঠেরা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার পরে, পুলিশ পদক্ষেপ করতে শুরু করে। তার আগে, ঘটনায় স্বতপ্রণোদিত তদন্ত করলে কি অভিযুক্তরা সময়ে ধরা পড়তে পারত? নাকি অভিযুক্তদের রাজনৈতিক পরিচয় দেখেই তাঁদের আড়াল করার চেষ্টা চালাচ্ছিল থানা? জেলার পুলিশ সুপার রাহুল দে বলেন, ‘‘তদন্তে দেরি, গাফিলতি কোনওটাই হয়নি। অভিযোগ পাওয়ার পরেই এলাকায় পুলিশ যায়। প্রথমে অভিযোগে মারধরের কথাই বলা হয়েছিল। অভিযুক্তদের খুব দ্রুত ধরতে এলাকায় তল্লাশি চলছে।’’
অভিযুক্তরা তৃণমূলের বলেই দাবি বিজেপির এবং আদিবাসী সংগঠনের। বিজেপির আদিবাসী নেতা বুধরাই টুডু বলেন, ‘‘পুলিশ পদে পদে গাফিলতি করেছে বলেই খবর পেয়েছি। অভিযুক্তের রং না দেখে তাঁকে গ্রেফতার করে সাজা দিতে হবে।’’ এলাকায় যেতে পারেন বিজেপির তফসিলি শাখা সংগঠনের সদস্যেরা।
তৃণমূলের একাংশের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, অভিযুক্তেরা আদিবাসী সংগঠন করে। কিন্তু আদিবাসী সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মহলের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার নেতা অরুণ সরেন বলেন, ‘‘আমাদের সংগঠন প্রথাগত জাতিভিত্তিক সংগঠন। এই সংগঠনের সদস্যেরা কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। আমাদের সংগঠনের বাইরে অভিযুক্তরা তৃণমূলই করে। নিজের গায়ের কালি বাঁচাতে আমাদের সংগঠনের নাম জড়ানো হচ্ছে। এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’’ যদিও জেলা তৃণমূল সভাপতি মৃণাল সরকার বলেন, ‘‘অভিযুক্তেরা কোনও ভাবেই তৃণমূল নয়। এখানে রাজনৈতিক শিবিরের চেয়েও বড় কথা, অপরাধীদের ধরতে হবে। অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। আমরা পরিবারের পাশে রয়েছি।’’