শিলিগুড়িতে তল্লাশি। —নিজস্ব চিত্র।
বালিগঞ্জে জন্মদিনের পর্টিতে আবেশ দাশগুপ্তের মৃত্যুর ঘটনার জেরে শিলিগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গে যথেচ্ছ মদ বিক্রি ও নেশার আসর রুখতে অভিযানে নেমে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন। অনেক সময়ই খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে দেখছে, নেশারুরা উধাও। আসর সুনসান।
সরকারি সূত্রের খবর, বুধবার রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ উত্তরবঙ্গের এডি়জি এন রমেশবাবুকে কলকাতায় ডেকে উত্তরবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিশদে খোঁজখবর নিয়েছেন। পুলিশ সূত্রের খবর, ডিজির তলব পেয়ে সেখানে হাজির ছিলেন মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপারও। পাহাড় থেকে সমতল, বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ভুটান লাগোয়া জনপদ, সব জায়গায় ঢালাও মদের আসর রুখতে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেখানে। তাতেই গা ঘামাতে দেখা যাচ্ছে পুলিশকে। উত্তরবঙ্গের এক শীর্ষ পুলিশকর্তা জানান, শীঘ্রই পানশালা ও মদ বিক্রেতাদের নিয়ে বৈঠক হবে। নাবালক-নাবালিকাদের মদ বিক্রি নিয়ে নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার ব্যাপারে সকলকে সতর্ক করে দেওয়া হবে। প্রতিটি মদের দোকানে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো বাধ্যতামূলক করা হবে, যাতে পুলিশ আচমকা অভিযান চালিয়ে কার কাছে মদ বিক্রি করা হচ্ছে, তা পরীক্ষা করে দেখতে পারে।
কিন্তু মুখে কড়াকড়ির কথা বললেও বাস্তবে কতটা কাজের কাজ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পুলিশ-আবগারি দফতরের মধ্যেই।
এ সবের ফাঁকে চোখ রাখা যাক সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায়।
দমাদ্দম বিয়ার-বোতল
সম্প্রতি গুলমা স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছিল আলিপুরদুয়ারগামী প্যাসেঞ্জার ট্রেন। সবে সন্ধ্যা। আচমকা ট্রেনের জানালায় দমাদম পড়তে লাগল বিয়ারের ফাঁকা বোতল। যাত্রীরা চমকে ছোটাছুটি শুরু করে দিলেন। আধো অন্ধকারে দেখলেন লাইনের ধারে সারি সারি বাইক রেখে বসেছে নেশার আসর। ফোন করা হল রেল পুলিশ ও রেল সুরক্ষা বাহিনীর কাছে। কিন্তু অন্ধকারে মহানন্দা অভয়ারণ্যের মধ্যে গুলমাখোলায় তখন অভিযান চালাবে কে! ফলে, ওই এলাকায় ট্রেনের জানালা বন্ধ করে রাখা ছাড়া উপায় নেই আর।
কুলিকের ধারে কারা
কুলিক পক্ষী নিবাসের পাশেই অনেকটা ফাঁকা জায়গা। গাড়ি নিয়ে সেখানে হাজির হন অনেকেই। গাড়ির মধ্যে বসে মদের আসর। এলাকার বাসিন্দারা বহু বার নানা মহলে অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু, পুলিশ পৌঁছনোর আগেই গাড়ি নাকি উধাও হয়ে যায়। কী ভাবে খবর পায়, তা নিয়েও চলছে মুখরোচক আলোচনা।
নেশাগ্রস্তের মুক্তাঞ্চল
সেবক থেকে গজলডোবা, কোথাও সরকারি অনুমোদন প্রাপ্ত মদের দোকান নেই। কিন্তু টাকা ফেললেই মেলে সব রকম মদ। মেগা ট্যুরিজম হাব হতে চলা গজলডোবায় গিয়ে তিস্তার বোরোলি মাছ ভাজা আর মদ খেতে রোজ অন্তত শতাধিক গাড়ি-বাইকের ভিড় উপচে পড়ে। অভিযোগ, কয়েক জন নেতা-মন্ত্রীর একান্ত অনুগামীদের প্রায়ই দেখা যায়। ফলে, ওই এলাকায় অভিযান চালানো সহজ নয়, সেটা একান্তে মানেন পুলিশের অনেক অফিসারই। বাসিন্দাদের অভিযোগ, মদ্যপ অবস্থায় তিস্তায় ডুবে যাওয়া বা বাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যুও একাধিক ঘটেছে।
জঙ্গলে ভাঙা বোতল
লাটাগুড়ি থেকে রাজাভাতখাওয়া, তিস্তার পাড় থেকে করলার পাশের পার্ক, সন্ধ্যা নামলেই জমিয়ে মদের আসর। ইদানীং তো দিনেও ঠান্ডা পানীয়ের সঙ্গে দেদার মদ বিক্রি হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকায়। লেগে থাকে মারপিট, বোতল ছোড়াছুড়ির ঘটনা। উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট পরিবেশপ্রেমী অনিমেষ বসু বলেন, ‘‘রাশি রাশি ভাঙা বোতল জঙ্গলের কী যে বিপদ ডেকে আনবে, কে জানে!’’