একজন কে গ্রেফতার করল পুলিশ। প্রতীকী চিত্র।
দম্পতিকে আত্মহত্যায় প্ররোচনায় অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূল পুর প্রতিনিধি সন্দীপ ঘোষকে নাগালে পেল পুলিশ। জেলা পুলিশের ডেপুটি পুলিশ সুপার (সদর) সমীর পাল জানিয়েছেন, সন্দীপকে শহর লাগোয়া অসম মোড় বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও বুধবার কোতোয়ালি থানায় দাঁড়িয়ে সন্দীপের দাবি, ওয়ার্ডের বাসিন্দারা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে তিনি আত্মসমর্পণ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ বিষয়ে সন্দীপ বলেন, ‘‘চক্রান্ত। খেলাটা শুভেন্দু অধিকারীর।’’ এ দিকে, আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে দেওয়ার আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও, জলপাইগুড়ি সার্কিটে এ দিন বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ বসতে না পারায় শুনানি হয়নি।
গত মঙ্গলবার ‘ফেরার’ সন্দীপের এক সহকারী এবং আত্মীয়াকে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। দীর্ঘ সময় জেরা করা হয় এবং দু’জনের মোবাইল ফোন ঘেঁটে দেখা হয়। ওই দু’জনের সূত্রেই সন্দীপের নাগাল মিলেছে বলে দাবি।
গত ১ এপ্রিল জলপাইগুড়ির পান্ডাপাড়ার বাসিন্দা প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান অর্পণা ভট্টাচার্য এবং তাঁর স্বামী তথা জেলা শিশুকল্যাণ সমিতির প্রাক্তন সদস্য সুবোধ ভট্টাচার্য কীটনাশক পান করে ‘আত্মহত্যা’ করেন বলে পরিবারের দাবি। দম্পতির ঘর থেকে উদ্ধার হয় ‘সুইসাইড নোট’। সেখানে টাকা চেয়ে হুমকি, বাড়ির দলিল আটকে রাখা, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর মতো একাধিক অভিযোগ ছিল। তার ভিত্তিতে জলপাইগুড়ি পুরসভার উপ-পুরপ্রধান সৈকত চট্টোপাধ্যায়, পুর প্রতিনিধি সন্দীপ ঘোষ-সহ চার জনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়। পুলিশ আদালতে জানিয়েছিল, সন্দীপ ফেরার।
এ দিন থানায় দাঁড়িয়ে সন্দীপ ওই সব অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘চক্রান্ত। খেলাটা শুভেন্দু অধিকারীর। গোটা বাংলা জুড়ে এই খেলাটা হচ্ছে। শুভেন্দু অধিকারীর মদতে আমার রাজনৈতিক গুরু সৈকত চট্টোপাধ্যায়কে আটকানোর জন্য এই খেলা হচ্ছে। কারণ, সৈকত চট্টোপাধ্যায় জলপাইগুড়ির রাজনীতির মেসি।’’
বিজেপির জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায় বলেন, ‘‘বিজেপি নেতাদের নাম উচ্চারণ করে উনি পাপ স্খালন করতে চাইছেন। কিন্তু দেশে আইন আছে।’’ সন্দীপের মন্তব্যে সায় দেয়নি তাঁর দলেরও একাংশও। তৃণমূলের শহর ব্লক সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘এটা ব্যক্তিগত বিষয়। রাজনীতির যোগ নেই।’’
এ দিন সন্দীপ আরও বলেন, ‘‘কোনও মৃত্যুই কাম্য নয়। তবে যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁরা কি ভাল লোক ছিলেন?’’ দলিল আটকে রাখা থেকে শুরু করে আরও বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে সন্দীপ বলেন, ‘‘আমি কারও দলিল আটকে রাখিনি। অর্পণা ভট্টাচার্যদের বিরুদ্ধে টাকা তোলার অভিযোগ ছিল। প্রতারিতেরা যখন সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের পার্টি অফিসে গিয়েছিলেন, উনি বিষয়টি বাইরে আলোচনা করে নিতে বলেছিলেন।’’
সন্দীপ দম্পতির কন্যা তানিয়া ভট্টাচার্যকেও ‘ব্যক্তিগত’ আক্রমণ করেন এ দিন, যা নিয়ে তানিয়া বলেন, ‘‘সদ্য মা-বাবা হারা মেয়ের বিরুদ্ধে উনি যা বলেছেন, তা নিয়েও আদালতের দ্বারস্থ হব। সিবিআই মামলার শুনানি শুরু হতেই আত্মসমর্পণ করলেন কেন? রহস্যটা কী?’’