প্রতীকী ছবি।
ঘরে ঘরে জ্বরে আক্রান্ত রোগী। দিনকে দিন বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যাও। এমনকী, জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঘটেছে মৃত্যুও। সাধারণ মানুষের সঙ্গে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন খোদ উপ-পুরপ্রধানও। তবুও যেন ঘুম ভাঙছে না মালদহের ইংরেজবাজার পুরসভা কর্তৃপক্ষের। এই পরিস্থিতিতে সরব হয়েছে বিরোধীরা।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, শহর জুড়ে ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দিলেও মশা নিধনে উদ্যোগী হচ্ছে না পুরসভা। মশা মারার কীটনাশক তেল, স্প্রে, ফগিং করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। এমনকী, নিকাশি নালা এবং জঞ্জালের স্তূপে পরিণত হয়েছে শহর। এর প্রতিবাদেই পুরসভার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলে পথে নামতে চলছে বিরোধী দলগুলি। আজ, মঙ্গলবার পুরসভা ঘেরাও অভিযানের ডাক দিয়েছে বামেরা। জেলার ডেঙ্গি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে প্রতিনিধি দল পাঠানোর দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখবেন বলে জানিয়েছে কংগ্রেস সাংসদ মৌসম বেনজির নুরও।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ২৬০ জন। তার মধ্যে ইংরেজবাজার শহরেই রয়েছে ৩৫ জন। এ ছাড়া শহরের ২৯টি ওয়ার্ডে প্রায় ঘরে ঘরে জ্বরে আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। গত, রবিবার ভোরে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শহরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে বুড়াবুড়িতলার বিপ্লব পাল নামে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। ওই ছাত্রের পরিবারের পাশেই সপ্তাহখানেক আগে একই পরিবারের তিনজন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন ছিলেন পুরসভার উপ-পুরপ্রধান দুলাল সরকার (বাবলা)।
যদিও বাসিন্দাদের অভিযোগ ডেঙ্গি-পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিলেও কোনও তেল স্প্রে করা তো দূরের কথা, ফগিং, ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হচ্ছে না। সেই সঙ্গে শহরের নিকাশি নালাও নিয়মিত সাফাই হচ্ছে না। এ দিন মালদহ জেলাশাসকের দফতরে প্রশাসনিক একটি বৈঠকের পরে কংগ্রেস সাংসদ মৌসম অভিযোগ করেন, ‘‘জেলাজুড়েই ডেঙ্গি ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়েছে। ঘরে ঘরে জ্বর। কিন্তু এই রোগ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য দফতর বা প্রশাসন ব্যর্থ। আর এই ব্যর্থতা ঢাকতে ডেঙ্গিতে মৃত্যুর তথ্য গোপন করা হচ্ছে। জেলার ডেঙ্গি পরিস্থিতি তুলে ধরে আমি মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখব।’’
পুরসভার বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে পথে নামছে বাম নেতৃত্ব। আজ, মঙ্গলবার শহর জুড়ে মিছিল করা হবে। তারপরেই পুরসভা কর্তৃপক্ষকে ঘেরাও, স্মারকলিপি প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র। তিনি বলেন, “জ্বর, ডেঙ্গির প্রভাবে আতঙ্কে রয়েছেন শহরবাসী। দিনের বেলাতে মানুষ জানলা দরজা বন্ধ করে থাকছেন। মানুষের সঙ্গে ঘুমিয়ে রয়েছেন পুরসভা কর্তৃপক্ষও। তাদের ঘুম ভাঙাতে আমরা রাস্তায় নমাছি।” বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অজয় গঙ্গোপাধ্যায়ও বলেন, “আমরা পুরসভা ঘেরাও করব।” যদিও পুরসভা কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান নীহাররঞ্জন ঘোষ। তিনি বলেন, “আমরা নিয়মিত কীটনাশক তেল, ফগিং করছি।’’ সোমবার দুপুরে ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদহ পুরসভার বিভিন্ন পুকুরে মাছ ছাড়েন জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য। ছিলেন ইংরেজবাজার পুরপ্রধান নীহার রঞ্জন ঘোষ এবং পুরাতন মালদহ পুরপ্রধান কার্তিক ঘোষ প্রমুখ।