সংশয়: সাংবাদিক বৈঠকে সংগঠনের সদস্যরা। বালুরঘাটে। নিজস্ব চিত্র
নতুন নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে আন্দোলনের পথে জেলার তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। সমাজে তাঁদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয় বলে অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা।
দক্ষিণ দিনাজপুরের তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের দাবি, নতুন নাগরিকত্ব আইন তাঁদের আরও বড় বিভেদের দিকে ঠেলে দেবে। রূপান্তরকামীরাও এনআরসি ও সিএএ নিয়ে শঙ্কিত।
দিনাজপুর নতুন আলো সমিতির সম্পাদক জয়িতা মণ্ডলের বক্তব্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে জীবিকার সমস্যা নিয়ে সমাজে মিশে থাকা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের পুনর্বাসনের দাবিতে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর অভিযোগ, এখনও তা পূরণ হয়নি— উল্টে সিএএ-র জেরে দেশের নাগরিকত্ব হারানোর আশঙ্কায় ভুগছেন ওই মানুষদের অনেকে। জয়িতার কথায়, ‘‘এক বিভেদ থেকে বাঁচতে গিয়ে সকলে এনআরসি-র মুখে পড়তে চলেছেন।’’
দিনাজপুর নতুন আলো সমিতির নেতৃত্বে তৃতীয় লিঙ্গ এবং রূপান্তরকামীরা নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন। সমিতির সম্পাদকের বক্তব্য, তাঁদের সকলের ভোটাধিকার রয়েছে। কিন্তু তার পরেও তাঁদের সামাজিক সমস্যার সমাধান হয়নি। তৃতীয় লিঙ্গের অসুস্থ কাউকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে পুরুষ না মহিলা, কোন ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হবে তা নিয়ে এখনও টানাপড়েন চলে বলে তাঁর অভিযোগ। তিনি জানান, দক্ষিণ দিনাজপুরের ভোটার তালিকায় ৯৬ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। বালুরঘাট শহরে সংখ্যাটি ১৯। গত বিধানসভা নির্বাচনে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
রাজ্যের রূপান্তরকামীদের সংস্থা সাকি-র প্রতিনিধি সুদীপা চক্রবর্তী জানান, লিঙ্গ পরিবর্তনের পরে অনেকেই শিক্ষা, সামাজিক ও জীবিকার সমস্যায় ভুগছেন। রাজনৈতিক দলগুলিও তাঁদের জন্য কিছু করছে না বলে অভিযোগ। উল্টে এনআরসি ও সিএএ লাগু করে আরও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সুদীপা। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ জনগণনা অনুযায়ী রাজ্যে ৩০ হাজার ৩৪৯ জন রূপান্তরকামী রয়েছেন। সংগঠন সূত্রে খবর, সম্প্রতি গঙ্গারামপুরে নতুন আলো সমিতির নেতৃত্বে শতাধিক তৃতীয় লিঙ্গের ও রুপান্তরকামী মানুষ একজোট হয়ে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে সরব হন। ওই সভা থেকে তাদের আর্থ-সামাজিক সুরক্ষার দাবি জানানো হয়। নতুন আলোর সম্পাদকের কথায়, ‘‘আমাদের ভোটাধিকার রয়েছে। কিন্তু এনআরসি এবং সিএএ-র জন্য প্রয়োজনীয় কোনও নথি নেই।’’ এর বিরুদ্ধে তাঁরাও আন্দোলন সংগঠিত করছেন বলে জানান জয়িতা।