তিস্তার তাণ্ডবে ভেসে গিয়েছে সিকিম। —ফাইল চিত্র।
তিস্তার মতো নদীর গতি আটকে বাঁধ নির্মাণ করে একের পরে এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হয়েছে। সম্প্রতি সে রাজ্যের দক্ষিণ লোনাক হ্রদে বিপর্যয় এবং হড়পা বানে চুংথাং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ ভেসে যাওয়ার পরে, এ বার এর বিরোধিতায় পথে নামছে সিকিমের একটি সংগঠন। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে হিমাচলপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গের একাধিক সংগঠনও। ৩ অক্টোবরের বিপর্যয়ের পর ইতিমধ্যে দু’একটি সভাও হয়েছে ওই বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে। তবে সব কিছু ঠিক থাকলে আজ, রবিবার উত্তর জঙ্গুতে প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হবে একটি সংগঠন। ভবিষ্যতে বিপর্যয় এড়াতে তিস্তা, রঙ্গিতের মতো নদীতে সমস্ত জলাধার তুলে দেওয়া এবং নতুন প্রকল্প বাতিলের দাবিতে সরব হয়েছে ‘অ্যাফেক্টেড সিটিজ়েন অব তিস্তা’ নামে ওই সংগঠনটি।
বিপর্যয়ের রাতে চুংথাং জলাধার জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে। জঙ্গুতে একটি সেতু ভেসে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরে স্থানীয় বাসিন্দারা এবং সেনা সহায়তায় বাঁশের সাঁকো বানানো হয় সেখানে। ওই এলাকার বাসিন্দাদের নিয়ে মিছিল হওয়ার কথা। সংগঠনের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক মায়ালমিত লেপচা বলেন, ‘‘আমরা এ ভাবে নদীর গতিপথে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ার বিরুদ্ধে। সমস্ত বিপজ্জনক প্রকল্প বন্ধ করা হোক। স্থানীয় বাসিন্দারা আজ এ কারণে বিপন্ন। আজ, রবিবার তাঁদের নিয়ে মিছিল করে প্রতিবাদ জানানো হবে।’’ এ ব্যাপারে সিকিম প্রশাসনের আধিকারিকদের একাংশ কিছু বলতে চাননি। এক আধিকারিকের কথায়, এখন বিপর্যয় মোকাবিলার কাজই তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন। অন্য বিষয় নিয়ে পরবর্তীতে ভাবা হবে।
আগেও ওই সংগঠনের তরফে প্রতিবাদে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে বলে দাবি। সংগঠনের অভিযোগ, আপার জঙ্গুতে তিস্তার একটি শাখায় বছর সাতেক আগে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরুর চেষ্টা হয়। সে সময় ধস নামে। হড়পা বানও হয়। প্রতিবাদে নামে পরিবেশপ্রেমী সংগঠনও। তার জেরে, কাজ বন্ধ রাখা হয়। যে সংস্থার কাজ করার কথা তারাও চলে যায়।
সংগঠনের অভিযোগ, লোয়ার জঙ্গুতে ৫২০ মেগাওয়াট স্টেজ-৪ আর একটি প্রকল্পের কথা রয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ করার কথা ‘ন্যাশনাল হাইড্রো-ইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন’ (এনএইচপিসি)-এর। গত ২২ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি জারি করে জমি অধিগ্রহণের কথাও তারা জানিয়েছিল। অথচ, স্থানীয় বাসিন্দারা এর বিরুদ্ধে। সিংতামের উপরে আরও একটি প্রকল্প তিস্তা-৬ হওয়ার কথা। সেখানে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কিছু কাজ করেছিল একটি সংস্থা। সে কাজও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এনএইচপিসি তা নিতে আগ্রহী।
সংগঠনের সদস্যেরা জানান, পরিবেশ আদালতেও তাঁরা গিয়েছিলেন, ২০০৯ সালে। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি সে সময়। তাই পরিবেশ আদালতের ওই রায়ে তারা খুশি ছিলেন না। চুংথাংয়ের প্রকল্পের বিরুদ্ধেও সিকিম হাই কোর্টেও জনস্বার্থে মামলা করেছিল সংগঠন। ২০০৯-২০১২ পর্যন্ত দৌড়ঝাঁপ করে তারা। লাভ হয়নি।
তবে এ বার চুংথাং জল বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতের তোপের মুখে পড়েছে সিকিম সরকার এবং এনএইচপিসি। সরকারি ভাবেই জানা গিয়েছে, হড়পা বানে চুংথাং বাঁধ ভেঙে পরিবেশ এবং এলাকা কী ভাবে এবং কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা জানতে চেয়েছে পরিবেশ আদালত। ২০ অক্টোবর ওই শুনানির দিন রিপোর্ট তলব করা হয়েছে।
সম্প্রতি দক্ষিণ লোনাক হ্রদ বিপর্যয়ের পর নিজেদের দাবি নিয়ে ফের তারা জোরদার দাবি তুলতে চায়। এ ব্যাপারে হিমাচল প্রদেশের ‘ইয়ুথ ফর হিমালয়’ তাদের পাশে। সংগঠনের সদস্য সুমিত মহার বলেন, ‘‘হিমালয় অঞ্চলে পরিবেশের ক্ষতি করে যা হচ্ছে, আমরা তার বিরুদ্ধে। এক জোট হয়ে আমাদের এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।’’ ‘নর্থ ইস্টার্ন সোসাইটি ফর প্রিজ়ারভেশন অব নেচার অ্যান্ড ওয়াইল্ড লাইফ’ (নেসপন) এর তরফে সৌমিত্র ঘোষ, অর্ণব ভট্টাচার্যদের দাবি, ‘‘কোনও ভাবেই তিস্তায় নতুন জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নয়। বিপজ্জনক প্রকল্পগুলোও বন্ধ করা হোক।’’