প্রতীকী ছবি।
ভূমিকম্পের আতঙ্কে ফিরল উত্তরবঙ্গ। শনিবার সন্ধেবেলায় কম্পন অনুভূত হয়েছে উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায়। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, কম্পনের উৎসস্থল ছিল অসমের বঙ্গাইগাঁও। কম্পনের তীব্রতা ছিল রিখচার স্কেলে ৫। তীব্রতা তেমন বেশি না হলেও, আতঙ্ক জাঁকিয়ে বসে। ২০১১ সাল থেকে বারবার তীব্র কম্পনে কেঁপেছে উত্তরবঙ্গ। কখনও সিকিম, কখনও বা নেপালে তীব্র কম্পন হয়েছে। ২০১১ সালে সিকিমের মঙ্গনে কম্পনের জেরে উত্তরবঙ্গের ভূগর্ভস্থ প্লেটগুলির ভারসাম্য অনেকটাই বিঘ্নিত হয়েছিল বলে বিজ্ঞানীরা দাবি করেন। তার পর থেকেই বছরে কম্পনের সংখ্যা উত্তরবঙ্গে বেড়ে যায় বলে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করেছেন। এবং সেই সময় থেকেই কম্পন-আতঙ্ক জাঁকিয়ে বসে উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের মধ্যে।
শনিবার সন্ধ্যেয় জলপাইগুড়ির দেশবন্ধুপাড়া-সহ বেশ কিছু এলাকায় ছুটোছুটি পড়ে যায়। বহুতল থেকে নেমে আসতে শুরু করেন বাসিন্দা। শাঁখ বাজানো শুরু হয়, উলুধ্বনি শোনা যায়। কোচবিহার শহরেও অনেকে বাড়ি থেকে খোলা জায়গায় বেরিয়ে আসেন। বেশ কিছু এলাকায় মহিলারা উলুধ্বনি দেন। প্রশাসনের এক কর্তা জানান, কোথাও ক্ষয়খতির খবর আপাতত নেই। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
কয়েক দিন ধরেই দিনের বেলায় কড়া রোদ, রাতে জাকিয়ে ঠান্ডা পড়ছে। বিজ্ঞানীরা দাবি করে থাকেন, ঘন ঘন আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলেও অনেক সময়ে ভূপ্রাকৃতিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে। তবে এ সবের সঙ্গে ভূমিকম্পের সরাসরি যুক্ত থাকার কোনও সম্ভাবনা এখনও স্পষ্ট নয়।
এ দিনের ভূমিকম্প মাটির নীচে ইউরেশিয়া প্লেট এবং ইন্ডিয়ান প্লেটের চ্যুতির কারণেই হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং জেলায় ভূমিকম্প টের পেয়েছেন বাসিন্দারা। আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারে কম্পনের মাত্রা তুলনায় বেশি ছিল বলে দাবি।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, “উত্তরের বেশ কিছু এলাকায় কম্পন অনুভূত হয়েছে। এর আগে একাধিক কম্পনের উৎসস্থল ছিল রাজ্যের সীমা ঘেঁষা অসম। জলপাইগুড়ি জেলাও সম্প্রতি কয়েকটি কম্পনের উৎসস্থল ছিল।”
গত ২৪ ডিসেম্বরেও ভূকম্পন হয়েছিল উত্তরবঙ্গে। সে বার উৎসস্থল ছিল জলপাইগুড়িতে। অল্প সময়ের ব্যবধানে বারবার কম্পন বাসিন্দাদের আতঙ্কিত করে তুলেছে। ২০১১ সালে সেপ্টেম্বরে ভূমিকম্পনের পরে ছোট-বড় অন্তত পঞ্চাশটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল ৬ মাস ধরে। তখন থেকেই আতঙ্ক জাঁকিয়ে বসে। এ দিনের কম্পনে সেই স্মৃতি ফিরেছে উত্তরের বাসিন্দাদের। সে বারও টানা বৃষ্টি চলছিল। এখন দিনে এবং রাতের তাপমাত্রার তারতম্য অনেকটাই। দিনের বেলায় সোয়েটার-জ্যাকেটে বেশ গরম অনুভূত হচ্ছে, রাতে জাকিয়ে ঠান্ডা পড়ছে বলে বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা। আবহাওয়ার এই খেয়ালিপনাই আতঙ্ক বাড়িয়েছে বলে দাবি।