এখনও ত্রাণ শিবিরে। নিজস্ব চিত্র
পুজো মানেই এক রাশ আনন্দ। হই-হুল্লোড় আর পেটপুজো। প্রতিবছর কালিয়াচক-৩ ব্লকের গোলাপমণ্ডল পাড়ার মধু, অভিলাষ, নির্মল ও তাদের আরও কয়েকজন বন্ধু মিলে অষ্টমীতে গঙ্গা পেরিয়ে ধুলিয়ানে ও নবমীতে গাড়ি ভাড়া করে জেলা সদর মালদহে প্রতিমা দেখে কাটায় তারা।
কিন্তু এবারে পুজোর আগে থেকেই গঙ্গার জলে প্লাবিত গোটা গোলাপমণ্ডল পাড়া গ্রাম। তাই ধুলিয়ান বা জেলা সদরের পুজোর প্রতিমা দর্শন শিকেয় তুলে শুধু নবমীর দুপুরে নৌকোয় ঘুরে পাশের গ্রাম পারলালপুরের চারটি পুজো দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হল মধু-অভিলাষদের। আর ওদের বাবা-মায়েরা এই প্লাবনের জেরে প্রতিমার মুখদর্শনই করতে পারলেন না। শুধু তাঁরাই নন, গোলাপমণ্ডল পাড়ার অসংখ্য পরিবার, যারা প্লাবনের জেরে ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু রাস্তার উপর ত্রিপলের নীচে আশ্রয় নিয়েছিল বা কোনওরকমে ঘরে ছিল, তারাও পুজোর চারদিন বাড়িতেই জলবন্দি হয়ে কাটাল তারা।
গোলাপমণ্ডল পাড়ার কয়েকশো পরিবার জলবন্দি হয়ে থাকলেও পুজোর চারদিন সরকারি ত্রাণের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ। তবে বিভিন্ন দল ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ত্রাণ বিলি করেছে দুর্গতদের। প্রশাসন অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে ত্রাণ বিলির কথা জানিয়েছে।
মালদহ জেলার কালিয়াচক-৩ ব্লকের পারদেওনাপুর-শোভাপুর পঞ্চায়েতের গঙ্গাপাড়ের গ্রাম গোলাপমণ্ডল পাড়া, পারঅনুপনগর, পারপরান পাড়া, পারলালপুর, শোভাপুর প্রভৃতি।
এবারে বর্ষার শুরুতেই গঙ্গা ভাঙনে ১৫টি পরিবারের ভিটেমাটি বিলীন হয় গঙ্গায়। ৩০টির বেশি পরিবার আতঙ্কে ঘরবাড়ি নিজেরাই ভেঙে অন্যের জমিতে আশ্রয় নেয়। এদিকে সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে গঙ্গার জল বাড়তে শুরু করে এবং বিপদসীমা ছাড়িয়ে সেই জল ঢুকে পড়ে গোলাপমণ্ডল পাড়া, পার পরানপাড়া সহ গোটা পারদেওনাপুর-শোভাপুর এলাকা জুড়ে। কয়েক হাজার পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়েন।
গোলাপমণ্ডল পাড়ায় পুজো হয় না। পাশের গ্রাম পারলালপুরে রাধাগোবিন্দ মন্দির-সহ চারটি সর্বজনীন পুজো হয়। এবারে এলাকার চারদিকে জল থাকায় পুজো বন্ধ হয়নি। গোলাপমণ্ডল পাড়ার যুবক মধু চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রতি বছর আমরা বন্ধুরা মিলে সপ্তমীতে পাশের গ্রাম পারলালপুরে প্রতিমা দেখি। অষ্টমীতে গঙ্গা পেরিয়ে ধুলিয়ান শহরে যাই প্রতিমা দেখতে। আর নবমীতে জেলা সদর ইংরেজবাজার শহরে। এবারে চারপাশ প্লাবনে ডুবে থাকায় পুজোর আমেজটাই মাটি হয়ে যায়।’’