ধুমধাম করে গাছের বিবাহ বার্ষিকী পালন। — নিজস্ব চিত্র।
দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুর পুরসভার সোনালি আর রাকেশের বিবাহ বার্ষিকী। আর তাতে নিমন্ত্রিত গোটা গ্রামের কয়েকশো মানুষ। আপাতদৃষ্টিতে এই খবরে অবাক হওয়ার মতো কিছুই নেই। কিন্তু যদি শোনেন, সোনালি এবং রাকেশ মানুষ নয় গাছ, কী বলবেন? আসলে, ২০১৯ সালে বট এবং পাকুড় গাছকে পাশাপাশি পুঁতেছিলেন গ্রামবাসীরা। বটের নাম সোনালি এবং পাকুড়ের নাম রাকেশ। পোঁতার এই বিষয়টির নাম দেওয়া হয়েছিল, ‘বিয়ে’। তার পর কেটে গিয়েছে পাঁচটি বছর। শনিবার তাই গ্রামবাসীরা সবাই মিলে হইহই করে পালন করলেন সোনালি আর রাকেশের পঞ্চম বিবাহ বার্ষিকী। ছিল ঢালাও খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্তও।
বুনিয়াদপুর পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে মাতৃছায়া সংঘের উদ্যোগে এই বিবাহ বার্ষিকী পালন করা হয়। ২০১৯ সালে স্থানীয় রীতি মেনে বট-পাকুড়ের বিয়ে দিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। তার পর সেই গাছের দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছেন গ্রামের সাধারণ মানুষই। বিগত পাঁচ বছরে গাছ দু’টি শাখা-প্রশাখায় বেড়েছে। অকাতরে ছায়া দিয়ে যাচ্ছে এলাকার মানুষকে। আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে কতই না পাখির! বিবাহ বার্ষিকীতে খাওয়াদাওয়ার আয়োজনের মধ্যে দিয়ে গ্রামবাসীরা নতুন করে গাছ রক্ষা করার শপথ নিয়েছেন। গাছ রক্ষা করার অভিনব এই প্রচেষ্টা স্বাভাবিকভাবেই নজর কেড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রতি বছরই এই গাছ দু’টিকে রক্ষা করার বার্তা দিয়ে আমরা বিবাহবার্ষিকী পালন করি। এ বারও গ্রামের মানুষকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানোর ব্যবস্থা হয়েছে। মেনুতে ছিল ভাত, ডাল, সবজি, লুচি এবং পায়েস। আগামী দিনেও সর্বত্র গাছ বা সবুজ রক্ষা করার অঙ্গীকার করছি আমরা।’’ এলাকাবাসী কালু রায় বলছেন, ‘‘পাঁচ বছর আগে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা দু’টি গাছকে তুলে নিয়ে এসে একসঙ্গে রেললাইনের পাশে লাগানো হয়েছিল। পাঁচ বছরের মধ্যে সেই গাছ এখন অনেক বড়। আমরা গাছকে আত্মীয় বলে মনে করি, তাই প্রতি বছর তাদের পোঁতার দিনটিকে বিবাহবার্ষিকী নাম দিয়ে উৎসবে শামিল হই।’’