চড়ুইভাতি ভুলেছেন, নববর্ষের ‘খাওয়া-দাওয়া’ আধারের লাইনেই

মোথাবাড়ি থেকে তাসিরুদ্দিন, বৈষ্ণবনগর থেকে এব্রাহিমেরা হাজির হয়েছিলেন সেখানে। ভোটার, আধার কার্ড সংশোধনে। 

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

ইংরেজবাজার শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২০ ০০:৫৯
Share:

প্রতীকী ছবি

তখন সবে সকাল হয়েছে। রাস্তার পাশে বসে ছেলে, স্ত্রীয়ের সঙ্গে আলুর দম দিয়ে রুটি খাচ্ছিলেন তাসিরুদ্দিন শেখ। তাঁদের পাশে বসেই মুড়ি চিবোচ্ছিলেন মহম্মদ এব্রাহিম মিয়াঁ।

Advertisement

চড়ুইভাতির আসর নয়।

নতুন বছরের প্রথম দিনে এমনই ছবি দেখা গেল মালদহের ইংরেজবাজার শহরের রাজমোহল রোড সংলগ্ন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে। বুধবার ভোরের আলো ফোটার আগেই মোথাবাড়ি থেকে তাসিরুদ্দিন, বৈষ্ণবনগর থেকে এব্রাহিমেরা হাজির হয়েছিলেন সেখানে। ভোটার, আধার কার্ড সংশোধনে।

Advertisement

তাসিরুদ্দিন, ইব্রাহিম বলেন, ‘‘এ রাজ্যেও নাকি এনআরসি লাগু হবে। তাই সব নথি ঠিক রাখতে হবে। তাই কার্ডের ভুল সংশোধনে গ্রাম থেকে শহরে আসতে হচ্ছে। নতুন বছরে পিকনিক, আনন্দ করার আগে দেশে থাকার নথি ঠিক করে রাখা বেশি জরুরি।’’

তাঁদের মতোই প্রতি দিন জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আধার, ভোটার কার্ড সংশোধনে ভিড় জমাচ্ছেন অনেকেই। কালিয়াচকের যদুপুর থেকে এসেছিলেন সামশের আলি। তিনি বলেন, ‘‘দিনমজুরি করে সংসার চালাতে হয়। কাজ ফেলে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে আধার কার্ড করেছি। সেই কার্ড ভুলে ভরা। তার দায় কার? এখন তা শোধরাতে আমাদের নাজেহাল হতে হচ্ছে।’’

বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলা মালদহ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এনআরসি, নতুন নাগরিকত্ব আইন নিয়ে আতঙ্কে ভুগছেন জেলার বাসিন্দাদের একাংশ। নথি সংগ্রহে ব্যস্ত তাঁরা। বৈষ্ণবনগরের ভগবানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের জোনাকিটোলা গ্রামের মহম্মদ এব্রাহিম মিঞা। তিনি জানান, আধার কার্ডে তাঁর জন্মতারিখ রয়েছে ১৯৭২ সালের ৩১ ডিসেম্বর। আদতে তা হবে ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি। তা সংশোধনেই ৫০ কিলোমিটার দূরের গ্রাম থেকে বুধবার ভোরে সপরিবার শহরে আসেন তিনি।

এব্রাহিম বলেন, ‘‘শুধু তা-ই নয়, আমার মেয়ের নাম শেহনাজ খাতুন। আধার কার্ডে রয়েছে শাহনাজ।’’ আধার কার্ডে তাসিরুদ্দিন শেখের বাবার নাম লেখা নেই। সে জন্য এ দিন ভোর ৪টে থেকে ব্যাঙ্কের সামনে লাইনে দাঁড়ান তিনি। তাঁর স্ত্রী রুমেলা বিবি বলেন, ‘‘নতুন বছরের প্রথম দিনে সবাই পিকনিকে যায়। বাড়িতে রান্না করা রুটি, আলুর দম নিয়ে এসে আমাদের ভোর থেকে কার্ড সংশোধনের লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে।’’

এ দিন এমনই ছবি দেখা গিয়েছে জেলার অন্য অনেকে জায়গাতেই। উৎসবের মরসুমেও আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন জেলাবাসীর একাংশ।

এমন পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরব শাসকদল। তৃণমূল নেতা নীহাররঞ্জন ঘোষ বলেন, ‘‘বিজেপি সরকার জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে মানুষের খাওয়া বন্ধ করেছে। এ বার এনআরসি চালু করে মানুষের মাথার ছাদও কাড়তে চাইছে।’’

তৃণমূল মানুষকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলছে বলে পাল্টা অভিযোগ করছেন জেলা বিজেপি সভাপতি গোবিন্দ মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘এনআরসি নিয়ে তৃণমূল মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement