খাগড়াবাড়ি-১ ব্লক অফিসের সামনে কালীপুজোর প্রস্তুতি। —নিজস্ব চিত্র।
সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। সভাপতি সীমা রায়। কোষাধ্যক্ষ তাইজুল কবির। উত্তরবঙ্গের ময়নাগুড়ির মধ্য খাগড়াবাড়ি গ্রামের কালীপুজোয়।
ষাটের দশক থেকে সম্প্রীতির মন্ত্রে এ পুজোর আয়োজন। প্রবীণদের দেখানো পথ ধরে আজও হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায় এক সঙ্গে আয়োজক এই সর্বজনীন কালীপুজোর। প্রতিমা আনা, পুজোর আয়োজন, অঞ্জলি দেওয়া, ভোগ বিতরণ— পুজো কমিটির মাথারা নন শুধু, সব কাজে হাত লাগান এলাকার সব ধর্মের মানুষজন। এটাই রেওয়াজ ময়নাগুড়ির এই পুজোর। ‘ধর্ম যার-যার, উৎসব সবার’— এটাই ‘থিম’ খাগড়াবাড়ির আলোর উৎসবের।
বাঁশ, কাপড়, প্লাইউড, কাঠ, থার্মোকল এবং অন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনে এনে উদ্যোক্তারা নিজেরাই ফি বছর মণ্ডপ তৈরি করেন। ময়নাগুড়ি-ধূপগুড়ি চার লেনের রাস্তার ধারে ময়নাগুড়ি ব্লক অফিস সংলগ্ন এলাকায় এখন জোরকদমে চলছে মণ্ডপ তৈরির কাজ। এ বার বৃন্দাবনের প্রেমমন্দিরের আদলে হচ্ছে মণ্ডপ। এখানেও সম্মিলনের ভাবনা— বৈষ্ণব আধারে নির্মিত রাধাকৃষ্ণ আর সীতারামের মন্দিরের আদলে মণ্ডপে শাক্ত উপচারে পূজিত হবেন দেবী।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্বাস মিয়াঁর কথায়, ‘‘আগের প্রজন্মের দেখানো পথ ধরেই আমরা হিন্দু-মুসলিম সবাই মিলে এক সঙ্গে উৎসবের আয়োজন করে আসছি। এলাকার সুখদুঃখও সবাই মিলে ভাগ করে নিই সারা বছর। হিন্দুবাড়ির কেউ মারা গেলে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শবদেহ শ্মশানে নিয়ে যাই। মুসলিমবাড়ির কারও মৃত্যু হলে হিন্দুরা কবরস্থানে যান এক সঙ্গে। ইফতার-ইদ, লক্ষ্মীপুজো-কালীপুজো আমাদের গ্রাম এক সঙ্গেই উদ্যাপন করে।’’
স্থানীয় মসজিদের ইমাম ইয়াকত আলি, এলাকার প্রবীণ নাগরিক রামদুলাল রায়েরা আলোর উৎসবের সব দিকের তত্ত্বাবধানে থকেন। দিনভর উপবাসে থেকে কালীপুজোর আয়োজনে হাত লাগান লিপি বেগম, সীমা রায়েরা। এলাকার হিন্দু-মুসলিম বাড়ি থেকে আসে পুজোর নানা উপকরণ। কালীপুজোয় বসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আসর।
পুজো কমিটির সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘‘সম্প্রীতি আর মেলবন্ধনই উৎসব। সে ঐতিহ্য বহন করা আমাদেরই কর্তব্য।’’